Last Update : December 18, 2022
করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি ও তার ভবিষ্যৎ বিষয়ে নাতিদীর্ঘ অথচ তথ্যসমৃদ্ধ রচনা উপস্থাপিত করা হলো
ভূমিকা
বিশ্বায়ন উত্তরকালে যেমন পৃথিবীর অর্থনীতিতে ও সমাজে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল তেমনি করোনা-র সময়ে এবং তারও পরে মানুষের জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় আমূল বদল এসেছে। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় ব্যাপকভাবে অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষার আয়োজন হয়েছে—যার ফলে এর সুফল ও কুফল দুই-ই দেখা দিয়েছে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে এখনো অনেকে দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে, যেখানে শিক্ষার পরিকাঠামো এখনো সকলের শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করতে পারেনি, সেখানে এই অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি সৃষ্টি করে বৈষম্য।
sahajbanglarachana.com
প্রাসঙ্গিকতা
করোনা সতর্কতায় লকডাউন-এর জেরে স্কুল কলেজে সরকারিভাবে তালা পড়ে পড়াশোনা তাই শুরু হয়েছে অনলাইন পদ্ধতিতে। শুধু পড়াশোনা নয়—নাচ, গান, ব্যাক্তিগত টিউশনের ভবিষ্যৎও অনলাইনে আটকে পড়েছে। অনেকেই সাম্প্রতিক অবস্থার বিবেচনায় অনলাইন ক্লাসের পদ্ধতির প্রশংসা করেছেন। তবে এই পরিকল্পনা রূপায়ণের বা বাস্তবায়নের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। আবার এই প্রশ্নও উঠেছে যে গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকায় অনলাইন ক্লাস কী কষ্ট কল্পনা নয়? sahajbanglarachana.com
অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতি
করোনার সময় যখন দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে যেতে সক্ষম হয়ে না, স্বাস্থ্যের কারণে সরকার ও স্কুল কলেজ বন্ধ রেখেছে, সেখানে অনলাইন পদ্ধতিতে অনলাইন পদ্ধতি শিক্ষাদানের কাজ করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। এমনকি ডিজিট্যাল ইন্ডিয়াতে সবকিছুই যেখানে অনলাইন পরিষেবার সুলভ কী হচ্ছে, সেখানে অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের অসুবিধা থাকায় কথা নয়। শিক্ষক/ শিক্ষিকারা সরাসরি গুগল মিট বা কনফারেন্স কল-এর মাধ্যমে তাদের লেকচার পৌঁছে দিচ্ছেন। এমনকি ভিডিওর মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষার উপকরণ (Study material) ওয়েবসাইটে দেওয়া হচ্ছে—যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয় পেয়ে যেতে পারে। তৈরি হচ্ছে ভার্চুয়াল ল্যাব ও ক্লাস। নির্দিষ্ট লেকচার, মডিউল ও অ্যাসাইনমেন্ট-এর সঠিক হদিশ পাওয়ার জন পোর্টাল ব্যবহারের জন্য শিক্ষার্থীদের কোর্সের নাম, শাখার নাম, সেমেস্টার নম্বর ও বিষয়ের কোড পূরণ করে পাঠাতে পারছে। sahajbanglarachana.com
শিক্ষায় বৈষম্য
ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই নতুন ধরনের অনলাইন ক্লাস যে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য আনবে–সে বিষয়ে মন্তব্য করেছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ এস্থার দুফলোর। তাঁর মতে কোভিড-১৯ উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সুনামি এনেছে। ভারতে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রায় ৩২ কোটি ছাত্রছাত্রী আপাতত গৃহবন্দী, এ নিয়ে সরকারের দীর্ঘস্থায়ী কোনো পরিকল্পনাও নেই। ভারতে মাত্র ২৮ শতাংশ পরিবারের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছেছে, গ্রামীণ এলাকায় তা মাত্র ১৫ শতাংশ-র মতো। তাই অনলাইনের সুবিধা পাবে মূলত উচ্চবিত্ত ও বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা। sahajbanglarachana.com
অনলাইন ক্লাসের অসুবিধা
বর্তমানে তো আবার দেশে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ ঘোষিত হয়েছে, সেখানে অনলাইন ক্লাসের জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নের কোনো প্রস্তাব আপাতত নেই। এই শ্রেণির ক্লাস-এর ক্ষেত্রে যে অনলাইন ক্লাসের অসুবিধাগুলি সৃষ্টি হবে তা হল:
(১) শিক্ষায় ধনীরা বা উচ্চবিদ্যা লাভবান হবে, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে শিক্ষাব্যবস্থা। কারণ ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে বি. পি. এল.-এর সংখ্যা যথেষ্ট, যেখানে করোনার পর বহু শ্রমিক, কর্মচারি বেকার সেখানে তাদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা কীভাবে এই খরচ সাপেক্ষ শিক্ষা পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত হবে। (২) এর ফলে শিক্ষায় dropout বাড়বে–শিক্ষা ব্যবস্থা আর সাধারণের নাগালে থাকবে না। শিশু শ্রমিক ও বেকারত্বকে বাড়িয়ে দেবে। (৩) ইতিমধ্যে বহু ছাত্রছাত্রী পেটের ভাত যোগাড়ের জন্য সবজির পসরা নিয়ে ফেরি করতে বেরিয়ে পড়েছে। (৪) যাদের স্মার্ট ফোন নেই, যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবাও দুর্লভ সেখানে গ্রামীণ এলাকার মানুষরা তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্র থেকে ছাড়িয়ে দিতে দ্বিধা করবেন না। (৫) অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় সরাসরি শিক্ষক/শিক্ষিকার সঙ্গে যেহেতু ছাত্রছাত্রীদের ভাব বিনিময় হচ্ছে না, তা অনেকাংশে কৃত্রিম হয়ে পড়ছে। ফলে প্রত্যেকদিনের পড়াশোনার কাজে আসছে শৈথিল্য। (৬) বিশেষ করে অনলাইন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা গ্রহণ-পদ্ধতি open access অথবা টুকে লিখে দেওয়ার ভাবনায় পর্যবসিত হওয়ায় বিশেষ গভীরে তাদের প্রবেশ না করলেও হচ্ছে। (৭) শিক্ষার বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় নমুনা সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতার হার ৮০.৫ শতাংশ-এ পৌঁছেছে। কিন্তু রাজ্যের মাত্র ৯.৪ শতাংশ পরিবারের হাতে কম্পিউটার রয়েছে, মাত্র ১৬.৫ শতাংশ পরিবারের কাছে ইন্টারনেটের সুবিধা রয়েছে। এমনকি বিদ্যুতের ঘাটতিও রয়েছে, তাই অনলাইন পদ্ধতি সকলের কাছে পৌঁছে যাবে না। (৮)সরকারি পরিষেবার মাধ্যমে সরকারিভাবে ইন্টারনেট শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেবার ক্ষমতা আর সরকারের সামর্থ্যের মধ্যে নেই, তাহলে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের কীভাবে সমস্যার সমাধান হবে? রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দুর্বল হলে ছাত্রছাত্রীরা আবার শিক্ষাক্ষেত্রে পরাধীন হবে। sahajbanglarachana.com
উপসংহার
লকডাউন-এর পর থেকে পড়াশোনায় অনলাইন পদ্ধতি বা ডিজিট্যাল মাধ্যম ক্রমাগত অপরিহার্য হলেও সেই মাধ্যম যদি সবার কাছে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে যে বৈষম্য সৃষ্টি হবে, সেই সম্ভাবনা থেকে মুক্ত হবার জন্য সরকারি পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা মানুষকে দিশেহারা করে তুলবে। জানি অনলাইন ক্লাসের সম্ভাবনা অপার তবে তা পাশ্চাত্যের ধনী দেশগুলিতে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতিকে আপামর ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিতে হলে চাই সর্বাগ্রে পরিকাঠামোর উন্নয়ন। sahajbanglarachana.com
How can i download this pdf??
পিডিএফ ডাউনলোড বাটন দেওয়া হয়েছে পোস্টের নিচে
Download বাটনে ক্লিক করুন।
তুমি কি ইন্ডিয়া থেকে লিখেছো।
হ্যাঁ। তবে দুই বাংলাই অন্বিষ্ট। বিশেষ কোনো রচনা প্রয়োজন হলে জানাবেন।