Last Update : December 1, 2023
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩, বাংলা প্রবন্ধ রচনা, Best Unique 9 Points, PDF
ভূমিকা
ক্রিকেট নামক উন্মাদনায় আক্রান্ত সকলেই। তরুণ-তরুণী, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, ধনী-দরিদ্র – সব বিভেদ যেন নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে এই একটি শব্দ। নাম–ক্রিকেট। দেশপ্রেমকেও অনুপ্রেরণা দেয় এই খেলা। ফুটবল বিশ্বকাপের মতো না হলেও ক্রিকেট বিশ্বকাপের উন্মাদনাকে ছোটো করে দেখার উপায় নেই। দশটি দেশের দশটি দল নিয়ে খেলা হলেও সারাবিশ্বে ক্রিকেট বিশ্বকাপ একেবারে অবহেলিত নয়। অফুরন্ত প্রাণপ্রাচুর্য, উৎসাহ, গ্ল্যামার, মান-মর্যাদা-খ্যাতি নিয়ে বিশ্বকাপের আমন্ত্রণকারী এবারে ভারত।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাস
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রধান উদ্যোক্তা প্রুডেনসিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। প্রথম তিনটি কাপ তাই প্রুডেনসিয়াল কাপ নামে পরিচিত। এবং প্রথম তিনটি বিশ্বকাপই ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
১৯৭৫-এ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপ। প্রথম বিশ্বকাপ ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে। ১৯৭৯-তেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ-এর দাপট অব্যাহত ছিল। সেবার হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ১৯৮৩-তে কপিলদেব-এর ভারত জয়ী হয়েছিল দুবারের বিজয়ী ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে ৪৩ রানে হারিয়ে। ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৬ সালে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা জয়ী হল। ১৯৯৯-২০০০, ২০০৩, ২০০৭ সালে জয়ী হয় অস্ট্রেলিয়া। ২০১১-তে ভারত শ্রীলঙ্কাকে এবং ২০১৫-তে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে এবং ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড নিউজিল্যান্ডোকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ী হয়। ২০২৩ সালে ত্রয়োদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হল।
২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশ
২০২৩ বিশ্বকাপে মোট দশটি দল খেলায় অংশ নিয়েছে। দলগুলি : অস্ট্রেলিয়া, ভারত, সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ড। এই প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দল খেলার যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
২০২৩-এর ক্রিকেট বিশ্বকাপ
এবারের বিশ্বকাপ ভারতে এককভাবে অনুষ্ঠিত হয় ৫ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। মোট দশটি শহরে এবার অনুষ্ঠিত হল এবারের বিশ্বকাপ। ম্যাচগুলি অনুষ্ঠিত হয় : আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, পুণে, মুম্বাই, চেন্নাই, দিল্লি, কলকাতা, ধর্মশালা, হায়দ্রাবাদ, লখনউ-তে।
এবারের প্রথম পর্বের খেলা রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রত্যেক দল নয়টি করে খেলায় অংশ নেয়। গ্রুপের শীর্ষ চার দল নক-আউট পর্বে উপনীত হয় এবং সেমিফাইন্যাল ও ফাইন্যাল খেলে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড – নক-আউট পর্ব খেলে। এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান নতুন দল হিসেবে আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছে। সবথেকে হতাশ করেছে গতবারের চাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাও খেলাও তদনুরূপ অসফল হয়েছে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ সেমিফাইনাল
প্রথম সেমিফাইন্যাল অনুষ্ঠিত হয় নিউজিল্যান্ড ও ভারত-এর মধ্যে। ভারত নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে যায়। দ্বিতীয় সেমিফাইন্যাল অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়া ও সাউথ আফ্রিকার মধ্যে। অপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনালে চলে যায়।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ ফাইনাল
ষষ্ঠবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতল অস্ট্রেলিয়া। আহমেদাবাদে এবারের ফাইনাল খেলা ছিল নাটকীয়। অস্ট্রেলিয়া আয়োজক দেশ ভারতকে ছয় উইকেটে পরাজিত করে। টস জিতে অস্ট্রেলিয়া ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায়। প্রথম খেলে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারত ২৪০ রান করে। রোহিত, বিরাট, লোকেশ রাহুলের ব্যাটিং থেকে এই রান আসে। জবাবে অস্ট্রেলিয়া চার উইকেট হারিয়ে ৪৩ ওভারেই ২৪১ রান করে। গ্রুপ পর্বে যে অস্ট্রেলিয়াকে নক-আউট পর্বে দেখার আশা অনেকে ছেড়েই দিয়েছিলেন, সেই অস্ট্রেলিয়া টানা ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের অধিকারী হয়ে যায়। সত্যিই স্বীকার করতে বাধা নেই যে, অস্ট্রেলিয়া বড়ো আসরে এখনো পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য একটি দল। সর্বমোট ছয়বার বিশ্বকাপ জিতে তারা তা প্রমাণ করেছে।
এই বিশ্বকাপ অনেকেরই বিদায়ী বিশ্বকাপ ছিল, যেমন – রোহিত শর্মা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, সাকিব আল হাসান, মহম্মদ শামি, ডেভিড ওয়ার্নার, কুইন্টন ডি কক এঁদের মধ্যে অন্যতম। যাইহোক এবারের বিশ্বকাপ নিঃসন্দেহে ছিল উত্তেজনাপূর্ণ, আবেগী, স্পন্দিত।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ রেকর্ডসমূহ
এবারের বিশ্বকাপ নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ,
(১) বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া ছয়বার বিশ্বকাপ জয়ী হয়েছে, যা এখনো পর্যন্ত রেকর্ড।
(২) এবার সর্বাধিক ৭৬৫ রান করেছেন বিরাট কোহলি ১১টি ম্যাচ খেলে, যা সচিনের ২০০৩ সালের ৬৭৩ রানের রেকর্ডকে ভেঙেছে। একইসঙ্গে তিনি সচিনকে টপকে ও.ডি.আই.-তে ৫০তম সেঞ্চুরি করেছেন।
(৩) বিশ্বকাপের অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হল ভারতের রোহিত শর্মা, রান ৫৯৭।
(৪) সর্বাধিক ২৪টি উইকেট পান মহম্মদ সামি (সেরা ৫৭ রানে ৭ উইকেট)।
(৬) অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সোয়েল সর্বোচ্চ ২০১ রান করেন।
(৭) কুইন্টন ডি কক সর্বোচ্চ ৪টি শতরান এবং বিরাট কোহলি ৬টি অর্ধশতরান করেন।
(৮) ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সেমিফাইনাল ম্যাচে সর্বোচ্চ উভয়ের রান ছিল ৭২৪।
প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বিরাট কোহলি, যা ২০০৩ সালের বিশ্বকাপকে স্মরণ করায়। বাউন্ডারিতে প্রথম অবস্থানে আছেন ভারতের রোহিত শর্মা। তবে রান সংগ্রহ, উইকেট শিকার সবকিছুতেই ভারতের দাপট দেখা গেলেও বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন এবার অধরা থেকেই গেছে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩-এ ভারতের প্রতিবেশী দেশ
এবারের বিশ্বকাপে ভারতের তিন প্রতিবেশীর মধ্যে পাকিস্তানের ফলাফল একটু আশাপ্রদ। পাকিস্তান এবারে পঞ্চম স্থানে খেলা শেষ করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা যথাক্রমে অষ্টম ও নবম স্থানে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে ক্রিকেটের উন্মাদনা সর্বাধিক থাকলেও বড় আসরে আমাদের সাফল্য আশানুরূপ হয় না।
উপসংহার
২৫ জুন, ১৯৮৩ এবং ২ এপ্রিল ২০১১ ভারতীয় ক্রিকেটের যে গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছিল, ২০২৩-এর ১৯ নভেম্বর ভারতের সেই গৌরব স্তিমিত হয়ে যায় দুরন্ত আশা জাগিয়েও। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ হয়। আপামর খেলাপ্রেমী মানুষের উল্লাস, আফশোস, দুঃখ, আনন্দ সপব নিয়েই শেষ হয় বিশ্বকাপ। খেলাপাগল ভারতীয়রা তাকিয়ে থাকবে ২০২৭ সালের দিকে এবং ক্রিকেটাররাও নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পাবে-এই আশা করা যেতে পারে।
পরের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪-এ। প্রত্যেক ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের আশা থাকবে ভারতীয় দল তাদের ব্যর্থতা শুধরে নিয়ে নতুনভাবে দলকে সংগঠিত করে সম্ভাবনার দ্বারকে উন্মোচন করবে ও আবার বিশ্বসভায় শ্রেষ্ঠ আসনের অধিকারী হবে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ বিষয়ে একটি নমুনা প্রবন্ধ রচনা এখানে প্রকাশিত হল। অবশ্যই তোমরা আরোও তথ্য ও লিখনশৈলীর মাধ্যমে লেখাটিকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তুলতে পারবে। শেয়ার করতে ভুলো না।
খেলাধূলা বিষয়ক আরোও বাংলা রচনা দেখতে ক্লিক কর