Menu

ছাত্রজীবনের খেলাধূলার ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা PDF


Last Update : December 19, 2022

ছাত্রজীবনের খেলাধূলার ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘যে শক্তি কর্মের উদ্যোগে আপনাকে সর্বদা প্রবাহিত করিতেছে সেই শন্তিই খেলার চাঞ্চল্যে আপনাকে তরঙ্গায়িত করিতেছে। শক্তির এই প্রাচুর্যকে বিজ্ঞের মতো অবজ্ঞা করিতে পারি না। ইহাই মানুষের ঐশ্বর্যকে নব নব সৃষ্টির মধ্যে বিস্তার করিয়া চলিয়াছে, সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম দেহ, সুস্থ মানসিকতার জন্য খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা।’ সত্যিই তো, ছাত্রজীবনে তাই খেলাধুলা ছাত্র সমাজের কাছে একান্ত অপরিহার্য। খেলাধুলার মাধ্যমে শুধু শরীরচর্চা নয়, নেতৃত্বশক্তি, পারস্পরিক সৌহার্দ্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ব প্রভৃতি চারিত্রিক গুণের প্রকাশ ঘটে।

sahajbanglarachana.com

খেলাধুলার গুরুত্ব

সুস্থ জীবনলাভের জন্য চাই খেলাধুলা। শরীর ঠিক রাখার জন্য চাই শরীরচর্চা। উন্নত দেশে (জাপানে) কলকারখানায় কাজ শুরুর আগে এই ব্যায়ামচর্চা করা হয়ে থাকে। এর দ্বারা কর্মশক্তির বিকাশ হয়, কাজে মন আসে। সেজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টিফিনের সময় বা অন্য সময়ে ছাত্রদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। সবাই জানে স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্যবান দেহ সুখ-সম্পদের অধিকারী। যারা অসুস্থ, দুর্বল, রুগ্ন তারা জীবনযুদ্ধে পদে পদে পরাভূত হয়।

পাশ্চাত্য দেশে খেলাধুলা

পাশ্চাত্য দেশে শুধু স্কুল কলেজে নয় খেলাধুলা জাতীয় জীবনের সঙ্গে অঙ্গীভূত। কেননা তারা মনে করে খেলাধুলা লক্ষ লক্ষ মানুষের ক্লান্তিনাশ, আমোদ উপভোগ ও মানসিক পরিতৃপ্তির উৎস। জার্মানি খেলাধুলাকে জাতির চরিত্র গঠনের অন্যতম প্রধান উপায় হিসাবে গুরুত্ব দিয়েছে। জার্মানিতে মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে এবং এদের উৎসাহিত করার জন্য রাষ্ট্রপতি স্বয়ং পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন খেলোয়াড়দের।

sahajbanglarachana.com

কিশোর বয়সে খেলাধুলা

কিশোর বয়সে শরীরচর্চার প্রয়োজনীয়তা যথেষ্ট। তাই সবদেশের বিদ্যালয় শিক্ষায় খেলাকে পাঠ্যক্রমে রাখা হয়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলার বিষয়টিকে বিদ্যালয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দৌড়ঝাপ, ড্রিল, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, হা-ডু-ডু, সাঁতার, যোগব্যায়াম, খো-খো প্রভৃতি খেলাধুলা ভারতবর্ষের স্কুলগুলিতে অবশ্য করণীয়। এইসব খেলাধুলার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের শুধু শরীর গঠনই হয় না, চারিত্রিক গঠনও হয়। খেলার মাঠে খেলোয়াড় সুলভ মনোভাব সৃষ্টি হয়। ছাত্রছাত্রীরা খেলার মাধ্যমে অনেক আনন্দ পায়।

আরো পড়ুন-  পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা pdf

চরিত্র গঠনে খেলাধূলা

খেলাধুলা ছাত্রদের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। খেলার মাঠে পারস্পরিক সহযোগিতা, চরিত্র গঠনে উদার মনোভাব, নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতি গুণগুলি জাগ্রত হবার অবকাশ পায়। বিদ্যালয়ে ছাত্রদের পড়াশোনার একঘেয়েমি দুরীভূত হয় খেলাধুলার মাধ্যমে। তাছাড়া জীবন যেখানে একটা খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়, সেখানে খেলাধুলার মাধ্যমে একটা উদার মনোভাব বা ‘স্পোর্টসম্যান স্পিরিট’ গড়ে ওঠে—যার দ্বারা তাদের জীবন হয় সুন্দর।

জাতি গঠনে খেলাধূলা

সুস্থ সবল জাতিগঠনে খেলাধুলা বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই জীবনের ঊষাকাল থেকে প্রতিটি মানুষের শরীরচর্চার জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন। খেলাধুলা মানে সমবেত ব্যায়াম। শরীরচর্চা ও শরীর গঠন যেমন তাতে হয়, তেমনি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রবণতারও শিক্ষা লাভ করা যায়। একের সংকল্প তখন মিশে যায় দলগত সংকল্পে যা ছাত্রজীবনেই সৃষ্ট হয়।

sahajbanglarachana.com

জাতীয়তাবোধে খেলাধূলা

খেলাধুলা ছাত্রদের জাতীয়তাবোধকে উদ্দীপ্ত করে। খেলাধুলায় দেশের সাফল্যে দেশবাসী জাতীয়তাবোধে গর্বিত হয়। ২০২১ সালে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নীরজ চোপড়ার স্বর্ণপদক লাভ, কিংবা ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জয়লাভ দেশবাসীর জাতীয়তাবোধকে উদ্দীপ্ত করেছে। সুতরাং খেলায় যারা অংশগ্রহণ করে অথবা দর্শক হিসাবে যারা খেলা দেখে খেলার প্রভাব কেবল তাদের মধ্যেই সীমিত নয়, বিস্তৃত হয় বর্ণসম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত দেশবাসীর উপর।

জাতীয় জীবনে খেলাধুলা

ছাত্রজীবনে খেলাধুলার বিশিষ্ট প্রভাব আছে ঠিকই কিন্তু সে প্রভাব যদি উপকারের পথে চালিত না হয়ে ভিন্ন পথে চালিত হয় তখন তার ক্ষতির পরিমাণও হয় ভয়াবহ। যেমন, খেলাধুলায় রাজনীতির অনুপ্রবেশ। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন খেলাধুলাকেও করেছে কলঙ্কিত। ক্রিকেটে কোন্ খেলোয়াড় প্রথম একাদশে খেলবে সেখানেও রাজনীতি প্রবেশ করেছে। দল গঠনে গোষ্ঠীবাজীও চোখে পড়ছে—যা মোটেই কাম্য নয়।

আধুনিক জীবনে খেলাধূলা

আধুনিক যুগ যান্ত্রিকতার যুগ, কৃত্রিমতার যুগ। প্রাচীনকালে মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে হত। কিন্তু এখন জীবনের সর্বক্ষেত্রে যন্ত্রের আধিপত্য। যন্ত্রই কাজ করে, মানুষ দাঁড়িয়ে বা বসে তা চালনা করে। ফলে কায়িক পরিশ্রম হয়। নিতান্ত অল্প। অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক পরিশ্রম বেশি হয়। মানসিক পরিশ্রমের সঙ্গে সমতা রেখে শরীর চালনা না হলে বিভিন্ন ধরনের অসুখের কবলে পড়তে হয়। অনিদ্রা, ক্ষুধামান্দ্য প্রভৃতি লক্ষণ শারীরিক পরিশ্রমের অভাবজনিত। তাই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত হতে গেলে খেলাধুলা ও শরীরচর্চা একান্ত জরুরি। ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলায় অভ্যস্ত হলে তাদের শরীর ও মন দুই ভাল থাকে।

আরো পড়ুন-  শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা PDF - সহজ বাংলা রচনা

sahajbanglarachana.com

উপসংহার

খেলাধুলা মানুষকে শক্ত সমর্থ করে তোলে, মানুষকে জীবন সংগ্রামে জয়ী করে, তার চরিত্র গঠন করে। খেলাধুলা মানুষকে জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত করে। সুতরাং নিয়মিত ও পরিমিত শরীরচর্চা সুস্থ জাতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই ছাত্র জীবনে খেলাধুলার চর্চা হওয়া অবশ্য প্রয়োজন। খেলাধুলায় জাতি শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে ওঠে। মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে বাধা-বিপত্তিকে সরিয়ে জীবনকে উপভোগ করার মানসিকতা।

অনুসরণে লেখা যায় :

ছাত্রসমাজ ও খেলাধূলা

ছাত্রজীবনে খেলাধুলার স্থান

ছাত্রছাত্রীদের চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা

বিদ্যালয় জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!