Last Update : February 15, 2022
সূচনা
কবি নজরুল তাঁর ‘ছাত্রদলের গান’ কবিতায় ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন,
“মোদের চোখে বিশ্ববাসীর/স্বপ্ন দেখা হোক সফল/আমরা ছাত্রদল।”
অর্থাৎ ছাত্রদল চায় বিশ্ববাসীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে। আমাদের এই ভারতবর্ষে অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এলেও, দেশের বহু মানুষ জীবনধারণের প্রাথমিক উপাদানগুলি থেকে এখনো বঞ্চিত। তাই ছাত্রছাত্রীদের দুর্বার প্রাণশক্তি পারে দেশের মানুষের তথা দেশগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে। কেননা তাদের মৃত্যুঞ্জয়ী সাহস, কর্মনিষ্ঠা, এগিয়ে চলার গতি ভারতবর্ষের বিভিন্ন সমস্যাকে সমাধানের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারবে।
অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা
স্বভাব বৈশিষ্ট্য
স্বভাব-বৈশিষ্ট্যে ছাত্রছাত্রীরা নব যৌবনের অগ্রদূত, তারা তারুণ্যের প্রতীক। সেই তারুণ্য কোনো বাধা-বন্ধ মানে না, কোনো পিছুটান তাদের নেই, জীবন-মৃত্যু তাদের পায়ের ভৃত্য। তাদের এই চারিত্রিক সম্পদ দেশের সম্পদ। কেননা আজকের ছাত্রছাত্রী ভবিষ্যতের একজন সুবিবেচক সুনাগরিক। সমাজের সংকটের দিনে ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে আসে বলেই তাদের শক্তিকে ছোটো করে দেখা যায় না। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের সামাজিক সংস্কার ও শৃঙ্খল মোচনের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা যথেষ্ট।
দেশসেবা ও দেশগঠন
দেশ মানে তো কোনো মূর্তি বা ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট’ পদার্থ নয়। দেশ মানেই দেশের মানুষ ও প্রকৃতি। তাই মানুষ ও প্রকৃতির সুরক্ষা হল দেশগঠন বা দেশসেবার মূল কথা। দেশের উন্নতি মানে অর্থনৈতিক উন্নতি ও সামাজিক উন্নতি। দেশ যেমন অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত হবে তেমনি দেশের মানুষ, মানুষ হিসেবে বিশেষ সম্মান বা মর্যাদাকে বাড়িয়ে দেবে—এটা দেশ ও দেশের মানুষ হিসেবে সকলের কাম্য। জগতসভায় দেশ শ্রেষ্ঠ আসন নেবে—এটা দেশের মানুষ হিসেবে কে না চায়? বলাবাহুল্য, এই শ্রেষ্ঠত্ব দেশের উন্নতিতে সম্ভব। এই উন্নতির ক্ষেত্রে যুবশক্তির প্রতীক ছাত্রছাত্রীর ভূমিকা রয়েছে। নিজেদের বিদ্যালয় ছাড়াও দেশের একটি বৃহৎ অংশ রয়েছে, তার উন্নয়নই হল দেশের উন্নয়ন এবং তা হল দেশপ্রেম।
অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা
দেশসেবার প্রয়োজনীয়তা
স্বাধীনতার অর্ধ-শতাব্দী পরেও ভারতবর্ষের সব মানুষ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রভৃতি পায়নি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের অসম বণ্টন, পরিবেশের অবনমন, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ভারতবর্ষের সংহতিকে নষ্ট করছে। তাই দেশের নাগরিক হিসেবে দেশগঠন বা দেশের সেবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। দেশের জন্য আমরা দেশবাসী, দেশ না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব যে বিপন্ন—একথা উপলব্ধি করলে দেশগঠনের উপযোগিতা ধরা পড়বে। আমরা সবাই ভাবি, ব্যক্তিগতভাবে উন্নতি মানেই তো দেশের উন্নতি। কিন্তু এ ধারণা জাতিগত দিক থেকে ঠিক নয়। কারণ এতে বৈষম্য সৃষ্টি হয়। আর এই কারণে দেশবিভাগ হয়। সেজন্য স্বামী বিবেকানন্দ লিখেছিলেন, ‘আমরা জন্ম থেকে দেশের জন্য বলিপ্রদত্ত।’ কারণ মানুষ যখন জননীর কোলে জন্মগ্রহণ করে তখন সে বাবা-মার সন্তান। কিন্তু যেই মুহূর্তে সে মাটিতে বা ভূখণ্ডে জন্ম নিল, সেই নিরিখে সে দেশেরও সন্তান। তাই দেশকে গঠন করার লক্ষ্যে দেশের সেবার প্রয়োজনীয়তা আছে। গাছের গোড়ায় জল ঢাললে যেমন গাছের কাণ্ড, পাতা, ফল, ফুল সঞ্জীবিত হয় তেমনি দেশকে ভালোবাসলে দেশের উন্নতিতে সাহায্য করলে আমরা নাগরিকরাও উন্নত হব। সেজন্য রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,
‘ও আমার দেশের মাটি তোমার ‘পরে ঠেকাই মাথা।
দেশগঠনে ছাত্রছাত্রীদের করণীয়
ছাত্রছাত্রীদের দেশগঠনের ক্ষেত্রে করণীয়গুলি হল: (এক) আগে দেশকে জানতে হবে। অর্থাৎ দেশের ভূগোল, ইতিহাস, সভ্যতা-সংস্কৃতি, সমাজ, সাহিত্য প্রভৃতিকে ভালো করে উপলব্ধি করতে হবে। (দুই) দেশের সঙ্গে আমাদের মা ও সন্তানের মতো অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক না গড়ে তুললে দেশের প্রকৃত উন্নতি ঘটানো সম্ভব নয়। (তিন) দেশকে জানা ও সম্পর্ক গড়ে তোলার পর দেশের আশু চাহিদা ও সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে। প্রশ্ন উঠবে, ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়ন যেহেতু একমাত্র উদ্দেশ্য সেখানে এ সব কীভাবে সম্ভব। সম্ভব হবে পড়াশোনার সূত্রে মানসিকতার মধ্যে বিষয়টিকে রাখলে। কারণ যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। মনে রাখতে হবে, ক্ষুদিরাম, সুভাষচন্দ্র তো ছাত্রাবস্থায় দেশগঠনের কাজে লেগেছিলেন। (চার) প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর নিজস্ব। একটি পরিমণ্ডল আছে। সেই পরিবেশে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অন্ন, বাসস্থান প্রভৃতি বিষয়ে কী সমস্যা রয়েছে, তা জেনে সে ব্যাপারে দলবদ্ধভাবে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তাদের পাশে দাঁড়ানো ও ঊর্ধ্বতন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো। (পাঁচ) সমাজে বহুদিনের কুসংস্কার, ভেদাভেদ, মৌলবাদ, আঞ্চলিকতা, ভাষাগত সমস্যা প্রভৃতি থেকেই গেছে। সেইসব সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ও ক্রমাগত প্রচার করা। (ছয়) যে কোনো অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, গুজব রটানো প্রভৃতি দেখলে প্রতিবাদী হওয়া। কোনো স্বার্থ বা লোভের বশবর্তী না হয়ে দেশের উন্নয়নে সদর্থক ভূমিকা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর গ্রহণ করা উচিত। (সাত) কথায় আছে, অস্ত্রের থেকে কলম শক্তিশালী। তাই ছাত্রছাত্রীদের দেশের উন্নয়নে যে কোনো সমস্যার প্রতিকারে কলম ধরা উচিত।
অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা
অসুবিধা
আমাদের এই বিশ্বায়নের যুগে আমাদের অভিভাবকরা চান তাঁদের একটি বা দুটি সন্তানকে ‘ক্যারিয়ারিস্ট’ তৈরি করতে। তাদের লক্ষ্য কোনো রকমে পড়াশোনা করে একটি চাকরি লাভ করা। সেক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেশপ্রেম আসবে কী করে? প্রতিযোগিতার আসরে টিকে থাকতে হলে কীভাবে এইসব অতিরিক্ত কাজ করা সম্ভব। উত্তরে বলা যেতে পারে, ছাত্রছাত্রীরাই পারবে তাদের অভিভাবকদের বুঝিয়ে এই বাধা উত্তীর্ণ হতে।
উপসংহার
ছাত্রছাত্রীরা তাই দেশের সেবা বা দেশগঠনে তাদের জাতীয় সত্তাকে মেলে ধরবে—একথা বলা যত সোজা, ততটা কঠিন তাকে বাস্তবায়িত করা। এজন্য আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও দেশের আপামর মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। তা না হলে আবার কোনো সমস্যায় দেশবিভাগ হওয়া-কে আটকানো যাবে না।