Last Update : July 21, 2023
আমরা যেভাবে দৈনন্দিন কাজকর্মে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে থাকি, তাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা কতখানি আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে তার মূল্যায়ন দরকার। সংক্ষেপে এই প্রবন্ধ রচনায় সহজভাবে কয়েকটি দিক তুলে ধরা হয়েছে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান PDF
সমজাতীয় রচনা :
প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান
প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
sahajbanglarachana.com
ভূমিকা
আধুনিক জীবনে যুক্তিবোধ ও কার্যকারণ পরম্পরা জ্ঞান থেকেই শুরু হল বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। আর সেই জয়যাত্রা থেকে প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে দিল মধ্যযুগীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তি। মানুষ আর অযথা ভাগ্যের উপর ভরসা না করে কিম্বা প্রকৃতির উপর শুধুমাত্র আস্থা না করে বিকল্পের সন্ধান করতে লাগল। ফলে ব্যবহারিক জীবনে কিম্বা নিত্য-নৈমিত্তিক কার্যে বিজ্ঞানের অবদানকে গ্রহণ করতে থাকল মানুষ। অবশ্য একথাও ঠিক যে, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান-নির্ভরতা মানুষকে করল কৃত্রিম, বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ কেড়ে নিল মানুষের শান্তি।
প্রাত্যহিক বা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত একজন মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞানের অস্তিত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। প্রাত্যহিক জীবনচর্যা, অফিস-কাছারি, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের অবদান। শুধু একটি দিনের জীবনচর্যাকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাব বিজ্ঞানের কি প্রভাব আমাদের উপর বর্তমান। যেমন, এলার্ম বেল শুনে ঘুম থেকে উঠতে হয়, তারপর দাঁত মাজার ব্রাশ, পেস্ট ও বাথরুম করা।
ফোয়ারার জলে স্নান, প্রাতরাশ করা, পরিবহনে চেপে কর্মস্থলে যাওয়া, পরিশুদ্ধ জল পান করা, কলিং বেল টিপে ডাকা, এয়ার কন্ডিশন ঘরে আরাম অনুভব করা ও লিফটের মাধ্যমে বহুতল বাড়িতে ওঠা, দূরভাষে নিত্য নৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় কথা সেরে নেওয়া, পাখার তলায় বসে আরাম করা, অবসর বিনোদনের জন্য রেডিও ও টিভি দেখা, খাদ্য তৈরি করার জন্য প্রেসার কুকার, মাইক্রো-ওভেন ব্যবহার করা, অসুস্থ হলে কি ধরনের অসুস্থতা নির্ণয় করা—সবক্ষেত্রেই প্রতিদিনের কাজে বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আমরা চলতে পারি না। এমনকি গ্রামের মানুষেরা বৈদ্যুতিক আলো ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমকে কাজে লাগাচ্ছে, কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষাবাদ করছে, গ্যাসের উনুন, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি ব্যবহার করছে। অফিস আদালতে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-মেল প্রভৃতি বিজ্ঞানের অবদান—যার দ্বারা দৈনন্দিন জীবনের কাজ সুচারু ও সুন্দর হয়ে উঠছে।
sahajbanglarachana.com
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
দৈনন্দিন জীবনকে যদি কয়েকটি ক্ষেত্রে ভাগ করে আমরা বিজ্ঞানের অবদান আলোচনা করি, তাহলে উপলব্ধি করতে পারব, বিজ্ঞানকে আমরা জানা বা অজানায় হোক্ কতটা গ্রহণ করেছি। প্রতিদিনের গৃহকার্য থেকে শুরু করে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বাচ্ছন্দ্য, আমোদ-প্রমোদ, কৃষি, শিল্প ও প্রযুক্তি পর্যন্ত সমস্ত ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে দৈনন্দিন জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে।
গৃহকাজে বিজ্ঞান
নিত্য-নৈমিত্তিক গৃহকাজে বাড়ির মেয়েরা আগে ঘর ঝাঁট দিত, মশলা বাটত, পুকুরে কাপড় কাচত, খড় কেটে গরুকে দিত, উনুনে ফুঁ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রান্না-বান্না করত। এখন বিজ্ঞানের কল্যাণে এসবের পরিবর্তে এসেছে ঘর পরিষ্কার করা মেশিন, খড় কাটা মেশিন, ওয়াশিং মেশিন, গ্যাসের উনুন, ফ্রিজ ইত্যাদি।
sahajbanglarachana.com
খাদ্য
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুষম খাদ্য সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট ধারণা গড়ে উঠেছে পুষ্টি বিজ্ঞানের প্রভাবে। প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে কীভাবে খাদ্য প্রস্তুত করা যায় এবং তাতে খাদ্য কীভাবে পুষ্টিকর হয় তার শিক্ষা গ্রহণ করেছে মানুষ। বিশুদ্ধ জল কীভাবে পান করতে হয়, কীভাবে বাড়তি খাদ্য ফ্রিজে রেখে খাওয়া যায় তার শিক্ষা দিয়েছে বিজ্ঞান।
শিক্ষা
পুঁথিপোড়োদের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই একজন শিক্ষার্থী দৈনন্দিন জীবনে ছাপাখানার প্রভাবে বিভিন্ন পুস্তক পেতে পারছে। এমনকি দুষ্প্রাপ্য বইয়ের পৃষ্ঠা জেরক্সের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারছে। গ্রহণ করছে কম্পিউটার, ক্যালকুলেটার, ইন্টারনেট যার দ্বারা দেশ-বিদেশের কোথায় কি ঘটছে জানতে পারছে। এমনকি বিদেশের কোন বইয়ের পৃষ্ঠায় কি লেখা রয়েছে তা জানা দৈনন্দিন জীবনেই সম্ভব হয়ে উঠেছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এমনকি একজন শিক্ষার্থীকে হ্যারিকেনের আলোর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করতে হচ্ছে না, তার পরিবর্তে বৈদ্যুতিক আলো গ্রহণ করতে পারছে।
কৃষি
দৈনন্দিন জীবনে কৃষিক্ষেত্রে যে সবুজ বিপ্লব ঘটেছে, তাও আধুনিক বিজ্ঞানের অবদান। বিশাল জনসংখ্যার দেশে সাধারণ মানুষের মুখে আহার তুলে দিতে কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের প্রয়োজন ছিল। যে দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তর আগে আমাদের সমাজে ছিল, বিজ্ঞানের দানে তার আর সম্ভাবনা নেই। | কারণ দৈনন্দিন জীবনে মানুষের আর আহারের অভাব নেই।
sahajbanglarachana.com
কুফল
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অনেক উন্নত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানুষ বিজ্ঞানের কুফলগুলিকে দূর করতে পারেনি। তাই বিজ্ঞান মানুষকে দিল বেগ কিন্তু কেড়ে নিল আবেগ। মানুষ যে পরস্পর নির্ভর হয়ে সামাজিক সৌহার্দ্যের মাধ্যমে জীবনধারণ করত, তা চলে গেল, পরিবর্তে এই স্বার্থসর্বস্ব কৃত্রিম জীবন। যে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মুখে আহার তুলে দেবার চেষ্টা হয়েছিল, তা-ই শেষপর্যন্ত বিধ্বংসী হয়ে পরিবেশকে দূষিত করন। আসলে এটা বিজ্ঞানের দোষ নয়, বিজ্ঞানকে যথাযথ ব্যবহারের ত্রুটি—যে ত্রুটি আমাদের জীবনকে বিষিয়ে দিতে পারে।
উপসংহার
সুতরাং দৈনন্দিন জীবনের যেদিকেই তাকাই না কেন বিজ্ঞানের প্রভাবকে অস্বীকার করার উপায় কারোর নেই। তবে একথাও ঠিক, অতিমাত্রায় যন্ত্র-নির্ভরতা মানুষকে করে দিচ্ছে যান্ত্রিক। কৃত্রিম মানুষ তাই বিজ্ঞানের শুভশক্তিকে ভুলে গিয়ে অশুভ শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে নিজেদের জীবনে। ফলে মানুষ হয়ে পড়েছে অমানুষ। মানুষের আন্তরিকতা, মানবত্ব আজ আর তেমন করে চোখে পড়ে না—কারণ মানুষ আজ বড় স্বার্থপর। অবশ্য এই স্বার্থপরতার কারণ বিজ্ঞান নয়, বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ।
sahajbanglarachana.com
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান বিষয়ে সাধারণ একটা ধারণা তোমরা এবার পেয়েছো। এখন তোমরা নিজেরাই এই লেখার মাধ্যমে আরো সুন্দরভাবে প্রবন্ধটি উপস্থাপন করতে পারবে।
Nice pragraph. l am very happy…..
ধন্যবাদ।
প্রবন্ধটি খুব সুন্দর।
কিন্তু আরও কিছু বিষয় থাকলে আরও ভালো হতো।??
ধন্যবাদ। পরামর্শের জন্য সাধুবাদ জানাই।
মোটামুটি ,তবে আরো ভালো করা উচিত।
দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা কিছু করি সব কিছুতেই বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান রয়েছে। আমাদের কৃষি নির্ভর দেশে কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অবদানও অপরিসীম। চাষের কঠোর পরিশ্রমের কাজ গুলিকে বিজ্ঞান অনেক সহজ সরল করে দিয়েছে।উন্নত মানের বীজ,সার,কীটনাশক,কিভাবে আমাদের দেশের কৃষি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তা নিয়েই আজকের উপস্থাপন কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা।