Menu

বন, বন্যপ্রাণী ও মানব জীবন PDF


বন, বন্যপ্রাণী ও মানব জীবন PDF

বন, বন্যপ্রাণী ও মানব জীবন PDF

sahajbanglarachana.com

ভূমিকা

রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন— ‘বনে থাকে বাঘ।/গাছে থাকে পাখি।/জলে থাকে মাছ।’ অর্থাৎ যে যার নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করবে। বন্যেরা থাকবে বনে, শিশু থাকবে মাতৃ ক্রোড়ে। তাহলেই বন ও বন্যেরা এবং শিশু ও মাতার পারস্পরিক সম্পর্ক যেমন প্রতিষ্ঠিত হবে তেমনি উভয়ের অস্তিত্বও সার্থক হবে। কিন্তু বর্তমানে নগরায়নের ফলে বন কেটে বসতি স্থাপিত হচ্ছে, ফলে বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্বের সংকট দেখা দিচ্ছে। বনের পশু ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে এবং মাতৃ অঙ্ক থেকে শিশুরাও বঞ্চিত হয়ে লালিত-পালিত হচ্ছে অন্য কোথাও। মানব জীবনের স্বার্থে, সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ আদৌ শুভ নয়।

sahajbanglarachana.com

বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব

মানবজীবনকে গতিময় রাখতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বন ও প্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যও প্রয়োজন বন ও বন্যপ্রাণীর। বন্য এবং বন্যপ্রাণী পরিবেশ বলতে শুধু জীবজন্তু নয়; উদ্ভিদ, জল, বায়ু, মাটি সবকিছুকেই বোঝায়। শুধু পরিবেশের ভারসাম্যের কারণেই নয়, অর্থনৈতিক দিক দিয়েও বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ যতটা না তাদের স্বার্থে তার চেয়ে বেশি মানবজীবনের স্বার্থে।

বিলুপ্তির কারণ

যে মানুষ তার জীবন বিকাশের উপাদান বন থেকে একদিন আহরণ করেছিল সেই মানুষ নিজেদের স্বার্থে এখন বন ধ্বংসে প্রবৃত্ত হল। ফলে বন্যপ্রাণীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের বাসস্থান নির্মাণ করার জন্য বন কাটার প্রয়োজন দেখা দিল। শুধু বাসস্থানের জন্য নয়, মানুষের বাঁচবার জন্য ও যথেচ্ছ ভোগের জন্য বন কাটতে মানুষ বাধ্য হল। অথচ সে তুলনায় গাছ লাগানোর কাজ কম হল। অথচ গাছ আমাদের অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে শুষে নেয়। অন্যদিকে বন কাটার ফলে বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্ব বিপন্ন হল। মানুষ তার খেয়াল চরিতার্থ করার জন্য লিপ্ত হল পশু হত্যায়।

আরো পড়ুন-  প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানুষের অসহায়তা pdf

sahajbanglarachana.com

সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কী করণীয়

ভারতে ১৯৭২ সালে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য আইন পাস হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য, বনের বাস্তুতন্ত্রকে সুস্থিত করার জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে বন ও বন্যপ্রাণীকে সুরক্ষিত রাখার পদ্ধতি হল বন সংরক্ষণ। এই আইনের প্রেক্ষাপট হল বিভিন্ন জায়গায় বন যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীও অবলুপ্ত হচ্ছে। কাঠবিড়ালী ও দাঁড়কাক শ্রেণির প্রাণী প্রায় অবলুপ্তির পথে। সুন্দরবনের বাঘও অস্তিত্বের শেষ ধাপে গিয়ে পৌঁচেছে। বন সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন—

(ক) পতিত জমিগুলিকে বনভূমির উপযোগী করে বনসৃজন ও রক্ষণাবেক্ষণ।

(খ) বন্যপ্রাণী, কীট-পতঙ্গগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও তাদের স্বাভাবিক জীবনধারণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা।

বর্তমানে বন যেভাবে কাটা হচ্ছে এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যেভাবে শৈথিল্য দেখা দিয়েছে, তাতে মানবজীবনের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। সম্প্রতি ওড়িশার নন্দনকাননে বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ মারা গেল—তাতে সকলের চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে। পরিবেশবিদরা এ বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু এই কাজ তো শুধু পরিবেশবিদদের নয়, আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে ভাবতে হবে। শুধু আইন করে এ কাজ করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন সার্বিক সচেতনতা। সরকারের নীতি ও কর্মপন্থার মধ্যেও স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন।

উপসংহার

শুধু আইন করে নয়, নান্দনিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে এইসব বিষয়। পশু হলেও তাদের বাঁচবার অধিকার আছে, কিংবা বন কাটলেও আবার যাতে নতুন বনসৃজন করা যায় তার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আধুনিক জীবনে কাঠের প্রয়োজন, তাই গাছ কাটতে হবে, কিন্তু তার বিকল্পটাও ভাবতে হবে। সভ্যতার নামে অসভ্যতা তো মানা যায় না। কারণ যেভাবে বন কেটে, পশু হত্যা করে মানুষ আজ নিজেকে সভ্য বলে পরিচয় দিচ্ছে, তারা নিজেরা জানে না কি সর্বনাশের পথে তারা চলেছে। আশার কথা, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বন্যায় বনগাঁর বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য থেকে শতাধিক হরিণকে বাঁচানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সরকার পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। প্রকৃতির শোভা সৌন্দর্য মানুষ ও প্রাণীর পারস্পরিক বিকাশের ক্ষেত্রে এই সংরক্ষণ তাই জরুরি। জরুরি মানববিকাশের পথকে সুগম করতে বন ও বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখা। নতুবা মানুষ একদিন নিজেদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে ফেলবে।

আরো পড়ুন-  অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ PDF

sasahajbanglarachana.com

অনুসরণে লেখা যায়

অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণীর সঙ্গে মানবজীবনের সম্পর্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!