Last Update : July 28, 2023
শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায় প্রবন্ধ রচনা PDF : বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বের জীবনী বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা লেখার মূল উদ্দেশ্য আমরা ছাত্রছাত্রীরা সেইসব মনীষীদের জীবনের নানা উত্থান পতনের কাহিনিকে কতখানি জেনেছি, তাঁদের আদর্শকে কতখানি আত্মীকরণ আমরা করতে পারি। তাঁদের জীবনের নানা কথা আমাদের যেমন চমকিত করে তেমনি আমরা বিস্মিত হই তাঁদের আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাবের উজ্জ্বলতায়। ছাত্রছাত্রীরা মনীষীদের জীবনের আদর্শ-বীরত্ব, তাঁদের রচিত গ্রন্থাবলী, সমাজে তাঁদের প্রভাব প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যয়ন করে তা সাজিয়ে লিখবে।
শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায় প্রবন্ধ রচনা PDF
শুরুর কথা
গোঁফকে বলে তোমার আমার–গোঁফকি কারও কেনা?
গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।
গোঁফচুরি
হাস্যরস ও ব্যঙ্গের যুগপৎ সম্মিলন যাঁর লেখায় লক্ষ করা যায় তিনি হলেন বাংলা শিশুসাহিত্যে অপরাজেয় শিল্পী সুকুমার রায়। বড়োদের জন্য সাহিত্য রচনায় দিকপাল রয়েছেন অনেকেই। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে শিশু-কিশোরদের জন্য অমর সাহিত্য রচনায় সুকুমার রায়ের জুড়ি মেলা ভার। শিশুদের মনের অন্তঃস্থলে প্রবেশের এমন সহজ, স্বচ্ছন্দ অধিকারী সুকুমার রায় ছাড়া আর কে বা আছে? শিশু মননের উদ্ভট, অবাস্তব জগতে প্রবেশ করে বিচিত্র খেয়ালখুশিতে ভরিয়ে তুলেছেন সৃষ্টিসম্ভারকে। আর একারণে তিনি জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক হিসেবে চিরকালীন স্থায়ী আসল লাভ করেছেন বাংলা সাহিত্যে।
জন্ম পরিচয়
পশ্চিমবাংলার কলকাতা শহরের এক খ্যাতনামা পরিবারে সুকুমার রায় ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। মাতার নাম বিধুমুখী দেবী। পারিবারিক ঐতিহ্যের সার্থক উত্তরাধিকারী ছিলেন তিনি। সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে সুকুমারের শৈশব কেটেছে।
শিক্ষাজীবন
কলকাতার সিটি স্কুল থেকে সুকুমার রায় এন্ট্রাস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা নিয়ে বিএসসি (১৯১১) ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গুরুপ্রসন্ন ঘোষ স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডনে চিত্রকলা ও মুদ্রণ প্রযুক্তি বিষয়ে পঠনপাঠন লাভ করেন। এ ছাড়াও ম্যানচেস্টার স্কুল ও টেকনোলজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভ করেন। কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষালাভ সম্পন্ন করে স্বদেশে ফিরে সাহিত্য চর্চায় যুক্ত হয়ে পড়েন।
শিল্পকলা চর্চা
সাহিত্যচর্চা
বাংলা শিশুসাহিত্যের জগৎ প্রসারিত হয় সুকুমার রায়ের পিতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর হাত ধরে। পরবর্তীতে সাহিত্যের এই শাখা সমৃদ্ধ হয় আর কয়েকজন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিকের ছোঁয়ায়। এঁরা হলেন যোগীন্দ্রনাথ সরকার, সুখলতা রাও, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার প্রমুখ। শিশুসাহিত্যের এইসব দিপালদের পরেই সুকুমার রায় এলেন তাঁর সব অসামান্য সৃষ্টিসম্ভার নিয়ে। কবি ও সমালোচক বুদ্ধদেব বসু, সুকুমার রায় সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সোনার খাতায় একটি নাম উঠল একটি, নতুন তারা আকাশে ফুটে উঠল – সুকুমার রায়’। সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্যের আকাশে ধ্রুবতারার মতো শিশু-কিশোরদের হৃদয়ে উজ্জ্বল ও ভাস্বর হয়ে আছেন।
বিদেশ থেকে সুকুমার রায় শিক্ষা সমাপ্ত করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে পিতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী সম্পাদিত শিশুকিশোরদের জন্য প্রকাশিত ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় নিয়মিত সাহিত্যচর্চা শুরু করলে শুরুতেই তাঁর প্রতিভা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গল্প-কবিতা-ছড়া-নাটক রচনায় ক্রমে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠলেন। তিনি একে একে লিখলেন ‘আবোল তাবোল’ (১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ), ‘হ-য-ব-র-ল’ (১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ) ‘পাগলা দাশু’ (১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ), ‘বহুরূপী'(১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ), ‘খাইখাই’ (১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ) ‘অবাক জলপান’, ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’, ‘শব্দকল্পদ্রুম’, ‘ঝালাপালা’ প্রভৃতি।
চিত্রচর্চা
তাঁর সমস্ত রচনার মতোই—ছবিগুলিও অসামান্য। এই ছবিগুলিও বাংলা চিত্রকলা চর্চার ক্ষেত্রে অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে।
কৃতিত্ব
সুকুমার রায়ের সাহিত্যে ইংরেজি সাহিত্যের বিশেষ প্রভাব লক্ষ করা যায়। বিশেষত এডওয়ার্ড লিয়র এবং লিউই ক্যারলের স্পষ্ট প্রভাব অনেকেই আবিষ্কার করেছেন। বিদেশে বহুদিন লেখাপড়ার সুবাদে বহু বিদেশি সাহিত্যিকের রচনার সঙ্গে সুপরিচিত ছিলেন। লিয়রের তুলনায় লিউই ক্যারলের সাহিত্যিক প্রভাব বেশি লক্ষ করা যায় সুকুমার সাহিত্যে। এই প্রভাব যে-কোনো গুণী লেখকদের মধ্যে পড়ে থাকে। এডওয়ার্ড লিয়রের ‘লিমেরিক’ এবং লিউই ক্যারলের ‘Alice in Wonderland’ সুকুমার পড়েছিলেন, আত্মস্থ করেছিলেন ঠিকই কিন্তু তাঁর ‘আবোল তাবোল’ কিংবা ‘হ-য-ব-র-ল’ গ্রন্থ দুটি বাংলার সোঁদামাটি গল্পযুক্ত। সুতরাং অনুকরণ নয়, প্রেরণা পেয়েছিলেন সুকুমার রায় বিদেশি সাহিত্যিকদের।
উপসংহার
বাংলা শিশুসাহিত্যের অমর শিল্পী সুকুমার রায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর, কলকাতা গড়পার অঞ্চলে নিজের বাসভবনে প্রয়াত হন। অকালপ্রয়াত সুকুমার রায়ের কাছে বাংলা সাহিত্য চিরকাল ঋণী হয়ে থাকবে। জীবনময় আনন্দ দান করে কবি লিখেছেন— “আদিমকালের চাঁদিম হিম তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম।” নির্মল কৌতুকের এমন প্রকাশ আর কোন্ সাহিত্যিকে মেলে? কবির শান্ত সমাহিত উচ্চারণ,
“ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর
গানের পালা সাঙ্গ মোর।”
আবোল তাবোল