Last Update : December 27, 2021
“সমুদ্রতীরে সূর্যোদয় দেখার অনুভূতি” নিজেদের নিজস্ব অনুভূতি বিষয়ক রচনা। তোমরা এইভাবে রচনাটি লিখতে পারো।
এই ধুলোময় শহরে সারি সারি বহুতল বাড়ির মাঝ দিয়ে সূর্যোদয় আমাদের কখনো বিস্মিত করে না। তাছাড়া শহুরে ব্যস্ততায় ভোরের সূর্য যে কখন মাঝ আকাশে পাড়ি দেয়, তার খবরই আমরা রাখি না।এই নিত্য দিনের জীবন থেকে ছুটি নিয়ে যখন আমরা কোথাও ঘুরতে চলে যাই, কোনো সমুদ্রতীরে কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলেতখন সেখানকার প্রতিটি জিনিস আমরা মন দিয়ে দেখি। আকাশে মেঘের আনাগোনা, পাখির ডাক, সূর্য-চাঁদ, তারা ভরা আকাশ সবকিছুতেই যেন আনন্দ খুঁজে পাই। আবার কিছু ঘটনা আমাদের স্মৃতিতে থেকে যায় অনেকদিন পর্যন্ত।
গত পুজোর ছুটিতে ঠিক হলো পুরী যাবো। আমরা তিনজন- বাবা, মা আর আমি। শুনে খুব আনন্দ হয়েছিল কারণ পুরী কখনো যাইনি। আর শুনেছি পুরীর সমদ্রের ঢেউ নাকি খুব উঁচু উঁচু। হাওড়া থেকে রাতে ট্রেনে উঠেছিলাম। ট্রেনের দোলানিতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পুরী পৌঁছে গাড়ি করে হোটেলে গেলাম। তারপর ক্লান্তিতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
সন্ধ্যার দিকে আমরা পুরীর বিচে গেলাম। দেখি কত লোকের আনাগোনা, কত মানুষ সমুদ্রের বিচে এসে ঘোরাঘুরি করছে। তখন সমদ্রের গর্জন শুনে বেশ ভয় পেয়েছিলাম আমি। সে কী গর্জন ! বাবা রাতে শোওয়ার আগে বললেন, কাল কিন্তু ভোরে উঠতে হবে। আমরা সূর্যোদয় দেখতে যাবো।
মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম বিচে। তখন সূর্য ওঠার অনেক বাকি। দেখলাম আমরা ছাড়াও অনেকেই চলে এসেছে, আরো আসছে। প্রায় সবারই হাতে ক্যামেরা। হয়তো সূর্যোদয়ের মুহূর্তটিকে ধরে রাখবে বলে। সেই বিশাল সমুদ্রের তীরে আমরা দাঁড়িয়েআছি সূর্যোদয় দেখবার জন্য। যে সূর্যকে আমরা প্রতিদিনই উঠতে দেখি কিন্তু তা দেখে আলাদা কোনো অনুভূতি আমাদের মনে জাগে না। সেইদিন সেই দৃশ্য দেখার জন্য কত লোকের উচ্ছ্বাস।
সময় বাড়তে লাগলো। আমি মুখিয়ে আছি কখন সূর্য ওঠে। একসময় ধীরে ধীরে লাল রঙের সূর্য উঁকি দিল বহু দূরের দিগন্তরেখায়। তারপর আস্তে আস্তে লাল রঙ আরো গাঢ় হলো। তখন কেন জানি না আমার মন খুশিতে ভরে গিয়েছিল। সত্যি সূর্যোদয়ের দৃশ্য এত সুন্দর আমি কখনো জানতে পারিনি। এখানে না এলে জানতে পারতাম না। আনন্দে আমার মন বারবার নেচে উঠছিল। এত লাল কিন্তু কোনো তীব্র আলো নেই। আমি একদৃষ্টে নবারুণের দিকে চেয়ে রইলাম। চিরপরিচিত অথচ কী উজ্জ্বল আর সুন্দর ! কত লোকে ক্যামেরায় ফটো তুলছে। কিন্তু আমি যেন নিজের মাঝেই হারিয়ে গিয়েছিলাম। তাই বাবার মোবাইল থেকে যে ছবি তোলাযাবে সেটা পর্যন্ত মনে ছিলনা। শুনতে পাচ্ছি সমুদ্রের গর্জন কিন্তু কালকের মতো ভয় লাগছিল না। মনে তখন আনন্দের রেশ।
এরপর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সূর্য তার রূপ পালটাতে লাগলো। পূর্বের সেই রূপ হারিয়ে সূর্যকে আর খুব বেশি সুন্দর লাগছিল না। কিন্তু সূর্যোদয়ের মুহূর্তটুকু আমার মনে ভাসছিল। আমরা তারপর চলে গেলাম হোটেলে। ব্রেকফাস্টের সময় হয়ে গিয়েছিল।
বাড়ি ফিরে আমি কতবার ভোরে উঠে সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখেছি। পুরীর সমুদ্রবেলায় দেখা সেই দৃশ্য কখনো আমি আর দেখিনি। সেই অপূর্ব মন-ভালো করা মুহূর্ত যখন আমার মনে ভেসে ওঠে তখনই আমার পুরী যেতে ইচ্ছে হয়।
অন্যান্য রচনা