Menu

সরকারি কাজকর্মে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাঞ্ছনীয় – বিতর্ক রচনা PDF


বিতর্কমূলক রচনায় নির্বাচিত বিষয়ের উপর পক্ষে বা বিপক্ষে একটি মত পরীক্ষায় দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীদের দেয় বিষয়ের উপর পক্ষে/বিপক্ষে লিখতে হয় সংহতভাবে। বিষয়টি বুঝে নিয়ে, নানা যুক্তিক্রম সাজিয়ে প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করাই এই ধরণের রচনার মূল বৈশিষ্ট্য।

সরকারি কাজকর্মে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাঞ্ছনীয়

বিপক্ষে

বাংলা মাতৃভাষা হলেও সরকারি কাজকর্মে বাংলা ভাষাকে মাধ্যম করার কোনো যুক্তি নেই। ইংরাজি ভাষাই ব্যবহার করা উচিৎ। অনেক ইংরেজি শব্দের পরিভাষা পাওয়া খুব দুস্কর। তাই বাস্তবের প্রেক্ষাপটে বাংলা নয় ইংরেজিকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

পক্ষে

বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। তার সঙ্গে যে আবেগ জড়িয়ে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। ভারতবর্ষ নানা ভাষার দেশ। এখানে সংবিধান অনুযায়ী কোনো জাতীয় ভাষা নেই। বিভিন্ন অঞ্চলের যেসব ভাষাকে সংবিধান স্বীকৃতি দিয়েছে তার মধ্যে বাংলা অন্যতম। এটি একটি এমন ভাষা যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও স্বীকৃতি পেয়েছে। মনে রাখতে হবে এই ভাষার সম্মানেই ২১ ফ্রেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে। অতএব এই সুমিষ্ট ভাষাকে কোনোভাবেই অশ্রদ্ধা করা যাবে না।

সংবিধানের ৩৪৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেক রাজ্য আইনসভায় রাজ্যে প্রচলিত এক বা একাধিক ভাষাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। ১৯৬১ সালে আমাদের রাজ্যে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাছাড়া রাজ্যের বিধানসভায় বাংলায় বক্তৃতা শোনা গেলে কেন সরকারি কাজকর্মে বাংলার গুরুত্ব থাকবে না।

পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশই বাংলাভাষী। বাংলা ভাষার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমাদের রাজ্যে কোনো প্রশ্নচিহ্ন থাকার কথা নয়। রাজ্যের উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রার্থীকে বাংলা ভাষা অবশ্যই জানতে হয়। তাহলে সরকারি কাজকর্মে বাংলাকে গুরুত্বহীন করে দেখা সমুচিত নয়।

ইংরেজি ও বহু ক্ষেত্রে হিন্দিতে সরকারি কাজকর্ম হয়। আমাদের জাতীয় স্বভাব এই যে, আমরা কোনো প্রচলিত রীতিকে বদলে নতুন কিছু সহজে নিতে পারি না। ইংরেজ শাসনকাল থেকে ইংরেজি ভাষার প্রতি আমাদের অন্ধ মোহ রয়ে গিয়েছে। ফলে তাকে ত্যাগ করে বাংলা ভাষায় কাজকর্ম করতে আমাদের প্রবল অনীহা। তা বলে ইংরেজি ভাষাকে বর্জন করাও কখনোই সমীচীন চিন্তাভাবনা নয়। কারণ এটি একটি এমন আন্তর্জাতিক ভাষা যা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই উৎকৃষ্ট মাধ্যমরূপে ব্যবহৃত। ‘প্রায়’ শব্দটি ব্যবহার করার কারণ হল, এখনও বহু দেশে এই ভাষা সেভাবে ব্যবহৃত নয়। কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ইংরেজিতে কাজকর্ম করে অভ্যাস এমন হয়েছে যে, অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কাজকর্ম করা কষ্টসাধ্য বলে অজুহাত ও যুক্তি দিচ্ছেন। আসলে বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের তেমন আন্তরিকতা নেই।

আরো পড়ুন-  অনলাইনে পঠনপাঠনই শিক্ষাকে পরিপূর্ণতা দেয় PDF

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ যদি বাংলা ভাষায় কাজকর্ম করতে পারে আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও তা করা সম্ভব। ইংরেজি জ্ঞানের অহংকার নিয়ে বাংলা ভাষাকে অচ্ছুৎ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ অল্পশিক্ষিত মানুষকে বঞ্চনা করা খুবই অনুচিত। তাই বাংলা ভাষার সঙ্গে সহযোগী অন্য ভাষায় শিক্ষাদান ও সরকারি কাজ হোক। কর্মধারার পরিধি এবং মানুষের পরিচিতি হোক আরও বিস্তৃত।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!