Last Update : March 8, 2023
সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা PDF :` বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বের জীবনী বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা লেখার মূল উদ্দেশ্য আমরা ছাত্রছাত্রীরা সেইসব মনীষীদের জীবনের নানা উত্থান পতনের কাহিনিকে কতখানি জেনেছি, তাঁদের আদর্শকে কতখানি আত্মীকরণ আমরা করতে পারি। তাঁদের জীবনের নানা কথা আমাদের যেমন চমকিত করে তেমনি আমরা বিস্মিত হই তাঁদের আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাবের উজ্জ্বলতায়। ছাত্রছাত্রীরা মনীষীদের জীবনের আদর্শ-বীরত্ব, তাঁদের রচিত গ্রন্থাবলী, সমাজে তাঁদের প্রভাব প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যয়ন করে তা সাজিয়ে লিখবে।
www.sahajbanglarachana.com

সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা PDF
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি
কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিলো
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভুক অমবস্যা এসে চলে গেল, কিন্তু সেই বোষ্টুমি আর এলো না
পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি ।
ভূমিকা
সহজ সত্যের স্পষ্ট ভাষণ এবং অকপট আত্মপ্রকাশই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখনীর বিশেষত্ব। আবেগের সংহত আত্মপ্রকাশে তিনি আশ্চর্য রূপকথার দেশকে যেন আহ্বান করেছেন। কথা বলার ভঙ্গিতে নিপুণ চারুকলা তাঁর সাহিত্যের মূল আকর্ষণ। তিনি বাংলা সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই অবাধ ও স্বচ্ছন্দ বিচরণ করেছেন। তিনি একাধারে কবি, ভ্রমণরসিক, প্রাবন্ধিক; অন্যদিকে কথাসাহিত্যিক। তাঁর মধ্যে তরুণ কবিরা যেমন পিতৃপ্রতিম স্নেহ ও সমর্থন লাভ করেছিলেন, তেমনি সাধারণ পাঠক সুনীল সাহিত্যে জীবনের সব ধরনের স্বাদ গ্রহণ করেছেন অনায়াসে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে বাংলা ভাষার জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর। বাবা কালীপদ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন পেশায় শিক্ষক। মা মীরাদেবী তাঁকে সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট করেন। দেশভাগের ফলে এ দেশে চলে আসার পর পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে রুজিরোজগারের জন্য তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হত। তার মধ্যেও তিনি সিটি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর প্রায় পাঁচ দশক তিনি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনকে শাসন করেছেন।
কর্মজীবন
‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকাতে আমরা পেয়েছি শক্তি চট্টোপাধ্যায়, তারাপদ রায়, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, দিব্যেন্দু পালিত, শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকা প্রকাশ করে তরুণ কবিদের প্রতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পিতৃপ্রতিম বাৎসল্য প্রকাশ করলেন। এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে তরুণ কবিরা আত্মপ্রকাশের সুযোগ পেলেন। শ্রীজাত, মল্লিকা সেনগুপ্ত প্রমুখের লেখা ‘কৃত্তিবাসে’ প্রকাশিত হল। তিনি পারলে সকলের কবিতাই ছেপে দেন। ‘কৃত্তিবাস’ তরুণ কবিদের মুখপত্র হয়ে উঠল। তিনি ‘দেশ’ ও ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকার সাহিত্য বিভাগের দায়িত্ব আমৃত্যু সামলে গেছেন। তাঁর চেয়ে বয়সে যাঁরা ছোটো, তাঁদের মনের যতটা জায়গা তিনি দখল করে আছেন; সমসাময়িক আর কেউ অতটা স্থান দখল করে নেই। নায়কোচিত কতকগুলি লক্ষণ তাঁর মধ্যে ছিল। এ ছাড়া তিনি কলকাতা পুরসভার শেরিফ হয়েছিলেন। সাহিত্য আকাদেমির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।
www.sahajbanglarachana.com
সাহিত্য জীবন
বাংলা ভাষায় তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পঙ্ক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় “নীললোহিত”, “সনাতন পাঠক”, “নীল উপাধ্যায়” ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
সব বয়সের মানুষের জন্যই তিনি লিখতেন, তবে কবি হিসেবে তিনি সর্বজনপ্রিয়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’ ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এরপর একের পর এক কাব্যগ্রন্থ রচনা করে গেছেন—‘মন ভালো নেই’, ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘স্মৃতিশহর’, ‘সুন্দরের মনখারাপ’, ‘নীলপদ্ম করতলে’ ইত্যাদি। তাঁর কবিতাতে রয়েছে প্রেম, প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা। প্রকৃতির এমন নিখুঁত বর্ণনা খুব কম কবির লেখাতে পাওয়া যায়। এক একটা পঙ্ক্তি ঝলসে ওঠে যেন। এটাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখার শৈলি, তাঁর নীরা আজও আধুনিক বাংলা কবিতার ‘মোনালিসা’। সমস্ত প্রেমিক হৃদয় কেঁপে ওঠে নীরার জন্য।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গদ্যে যে রিদম্ আছে, তা ধরা শক্ত। এ তো গদ্য নয়, যেন কবিতাই লিখেছেন। তা ছাড়া গদ্যে একটা অসাধারণ ছন্দ ধরা আছে। শিক্ষিত মানুষের মুখের ভাষা, চিঠির ভাষাই তাঁর গদ্যের ভাষা। ১৯৬৬-র শারদীয়া ‘দেশ’ প্রকাশিত ‘আত্মপ্রকাশ’ থেকে শুরু করে, ২০১২-র শারদীয়াতে ‘সরস্বতীর পায়ের কাছে’—এক দীর্ঘযাত্রা। এরই মাঝে ‘সেই সময়’, ‘প্রথম আলো’র মতো উপন্যাস; ‘জীবনস্মৃতি’, ‘অর্ধেক জীবন’ ইত্যাদি অজস্র ছোটোগল্প ও নানা ধরনের গদ্য এক জায়গায় করলে মনে হয়—’গগন নহিলে তোমারে ধরিবে কেবা!’ তাঁর ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’ ও ‘মনের মানুষ’ উপন্যাস দুটি যথাক্রমে শিশিরকুমার ভাদুড়ি ও লালন ফকিরের জীবনীর উপর ভিত্তি করে রচিত। ‘মনের মানুষ’ তো চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর যে অবাধ বিচরণ তার কোনো তুলনা নেই। তাঁর কবিতা এত আন্তরিক, এত স্বাভাবিক ও সুন্দর যে সেই কবিতা পাঠককে আবেগপ্রবণ করে তুলতে পারে—
‘যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!
যদি নির্বাসন দাও
সম্মাননা
তিনি কাব্যভাষাকে গদ্যে ব্যবহার করে গদ্যমাধুরী সৃষ্টি করেছেন। রবীন্দ্রনাথ এবং কল্লোল যুগের পর তিনিই বাংলা শিশুসাহিত্যকে অনেকখানি সমৃদ্ধ করেছেন। তার ফলে জীবিত অবস্থাতেই তিনি যে সার্থকতা লাভ করেছেন, তা যথেষ্ট ও অবিশ্বাস্য। ১৯৭২ ও ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে পেয়েছেন ‘আনন্দ পুরস্কার’, ১৯৮৩-তে ‘বঙ্কিম পুরস্কার’ এবং ১৯৮৫-তে পেয়েছিলেন ‘সাহিত্য অকাদেমি’ পুরস্কার।
শেষকথা
২৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে হৃদ্যন্ত্রজনিত অসুস্থতার কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। যদিও অগণিত বাঙালি পাঠক-পাঠিকার মনে তিনি আজও স্বমহিমায় বেঁচে আছেন, আশা করা যায় আগামী দিনেও থাকবেন।
www.sahajbanglarachana.com