সৈয়দ মুজতবা আলি, বাংলা প্রবন্ধ রচনা, Best Unique 7 Points, PDF
ভূমিকা
সৈয়দ মজুতবা আলি ছিলেন বিংশ শতকের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রম্য রচয়িতা ও জীবনবোধের নানামুখী অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ একজন সাহিত্যিক। বাঙালিয়ানার অহঙ্কারকে যিনি আমৃত্যু ধারণ করেছিলেন। যাঁর লেখায় প্রবলভাবে বিরাজ করে আন্তর্জাতিকতাবোধ। তিনি ছিলেন আজন্ম বোহেমিয়ান। শান্তিনিকেতনের এই প্রাক্তনী নানা দেশ পরিভ্রমণ করেও নিজ দেশ ও মা-কে সযত্নে হৃদয়ে লালন করেছেন প্রতি মুহূর্তে।
জন্ম ও বংশপরিচয়
১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত বাংলার শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত করিমগঞ্জে সৈয়দ মুজতবা আলির জন্ম হয়। পিতা সৈয়দ সিকান্দার আলি এবং মাতা সৈয়দ আয়তুল মান্নান খাতুনের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান।
শিক্ষাজীবন
সৈয়দ মুজতবা আলির প্রাথমিক শিক্ষার সূত্রপাত হয় গৃহেই। তারপর সিলেট গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে তাঁর ছাত্রজীবনের সূচনা। পিতার বদলির চাকরি হওয়ায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপন করে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি আসেন শান্তিনিকেতনে। এখানে তিনি গুরুদেব অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে আসেন। রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এখানে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, ফারসি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয় সহ পনেরোটি ভাষাশিক্ষা লাভ করেন।
১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে এখান থেকে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি আলিগড়ে যান। সেখানে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য তিনি ডি. ফিল লাভ করেন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৩৪-১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মিশরে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
কর্মজীবন
আফগানিস্তানে সৈয়দ মুজতবা আলির কর্মজীবনের সূত্রপাত। কাবুল মহাবিদ্যালয়ে তিনি ফারসি-ইংরেজি ভাষার অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। তিনি আফগানিস্তান ত্যাগ করে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি বিভিন্ন স্থানে নানা পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বভারতীর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
সাহিত্যজীবন
বহুভাষাবিদ এই পণ্ডিত বাংলা সাহিত্যে বিবিধ ভাষায় শ্লোক ও রূপক ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় রবীন্দ্রনাথ তাঁকে উচ্চতর সাহিত্যাদর্শে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সেখানে তিনি ‘বিশ্বভারতী’ নামের হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে লিখতেন। পরবর্তীতে তিনি ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায় যেমন : দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী প্রভৃতিতে কলাম লেখেন। তিনি বহু দেশভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমণলিপি। এ ছাড়াও লিখেছেন ছোটোগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। হাস্যরস সৃষ্টির মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে।
সৈয়দ মুজতবা আলি রচিত রচনাসমূহগুলি হল –
[উপন্যাস] – অবিশ্বাস্য, শবনম, শহর-ইয়ার প্রভৃতি।
[ভ্রমণ কাহিনি] – দেশে বিদেশে, জলে ডাঙায় প্রভৃতি।
[ছোটোগল্প] – চাচাকাহিনী, টুনি মেম, পঞ্চতন্ত্র, ময়ূরকণ্ঠী প্রভৃতি।
[গল্পমালা] – ‘রাজা উজির’, ‘বেঁচে থাক সর্দি কাশি’, ‘পুনশ্চ’, ‘পাদটীকা’, ‘বেল তলায় দু-দুবার’ ইত্যাদি।
পুরস্কার
সৈয়দ মুজতবা আলি প্রচুর সম্মান লাভ করেন তাঁর জীবদ্দশায়। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘নরসিংহ দাস’ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ‘আনন্দ পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। এমনকি মৃত্যুর পরও সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে মরণোত্তর ‘একুশে’ পদকে ভূষিত করে।
উপসংহার
১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ মুজতবা আলির জীবনাবসান হয়। তবে তাঁর লেখনির মধ্য দিয়ে তিনি আজও আমাদের মধ্যে অমর হয়ে রয়েছেন। পান্ডিত্যের সঙ্গে কৌতুকপ্রিয়তা, গাম্ভীর্যের সঙ্গে রঙ্গরসিকতা এবং আন্তর্জাতিকতার সঙ্গে ঘরোয়া বাঙালিয়ানার আশ্চর্য সমন্বয় ঘটিয়েছেন তিনি।
সৈয়দ মুজতবা আলি বিষয়ক বাংলা প্রবন্ধ রচনা সম্বন্ধে মতামত জানাতে ভুলো না। নিজেদের মতো করে রচনাটি সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
জীবনী ও মনীষী বিষয়ক অন্যান্য রচনা দেখ