Menu

আধুনিক জীবনে বৃদ্ধাবাস অপরিহার্য pdf


Last Update : February 15, 2022

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রবন্ধসূচিতে চার ধরণের প্রবন্ধ রয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো বিতর্কমূলক রচনা। একটি সমাজ-সংশ্লিষ্ট বিষয় এক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়। দেওয়া থাকে সেই বিষয়ের পক্ষে কিছু যুক্তি। পরিক্ষার্থীকে সেই যুক্তি খণ্ডন করে করে সেই বক্তব্যের বিরুদ্ধ মত প্রতিষ্ঠা করাই হলো মূল কাজ।


পক্ষে

আধুনিক সভ্যতায় অধিকাংশ পরিবার ছোটো পরিবার। বেশিরভাগ পরিবারে সন্তানসংখ্যা একটি। আবার শিক্ষা ও জীবিকার তাগিদে তাদের অনেকেই পাড়ি দেয় বিদেশে। যাদের সন্তান দীর্ঘকাল বা আজীবন বিদেশে থাকতে বাধ্য হয় বা স্বেচ্ছায় বেছে নেয় প্রবাসী জীবন, তাদের পিতা-মাতার জীবনে নিত্যসঙ্গী একাকীত্ব। যা প্রবাসী সস্তানকেও চিন্তিত করে তোলে।

বৃদ্ধবয়সে অবসর যাপনের জন্য প্রয়োজন সমবয়স্ক সঙ্গীর। বৃদ্ধাবাসে প্রায় কাছাকাছি বয়সের অনেক মানুষ একত্রে থাকেন। পারস্পরিক সাহচর্য তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। সুতরাং সন্তানের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে একাকীত্বের যন্ত্রণা ভোগ না করে বয়স্ক মানুষের বৃদ্ধাশ্রমবাসের সিদ্ধান্তই শ্রেয়। www.banglaguide.in


বিপক্ষে

ইংরেজ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস তাঁর ‘Sailing to Byzantium’ কবিতায় লিখেছিলেন– ‘That is no country for old men’—আর এই কথাটিই বহুক্ষেত্রে আমাদের কাছে পীড়া দেয়। মানুষের জীবন ঋতুচক্রের মতোই। ফলে মানুষ কৈশোর-যৌবনের শেষে একদিন বার্ধক্যে উপনীত হবে—এটাই শাশ্বত সত্য। বৃদ্ধাশ্রমবাসের সিদ্ধান্ত যে কখনো শ্রেয় অথবা সর্বৈব সত্য হতে পারে না, যুক্তিক্রম সাজিয়ে তা দেখানো হলো।

(১)     আধুনিক সভ্যতার কর্মব্যস্ত জীবন-জীবিকার সন্ধানে মানুষ বিদেশবিভুঁই-এ পাড়ি দেবে—এটাই স্বাভাবিক। আসলে কর্মচঞ্চল মানুষ কর্মক্ষেত্রে যাবে কিন্তু এর সঙ্গে তাকে এ কথাও বিস্মৃত হলে চলবে না যে, পিতা-মাতার প্রতি তার অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় চাকুরিজীবীরা অনেকসময় কাজের চাপে তাদের কর্তব্যবোধ বিস্মৃত হয়ে যায়। ফলে পিতা-মাতার উপর একজন সন্তানের যে দায়দায়িত্ব, তা তারা পালন করে না। যে মানুষ একসময় শ্রমের বিনিময়ে, নিজের জীবনের সুখ-আহ্লাদ ত্যাগ করে অসীম যত্নে পরম মমতায় সন্তান-সন্ততিদের লালিতপালিত করেছিলেন অথচ সেই মানুষ জীবনসায়াহ্নে অনাদরে পড়ে থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে। www.banglaguide.in

আরো পড়ুন-  চলভাষ ছাড়া জীবন অচল, উচ্চমাধ্যমিক বিতর্ক রচনা, PDF

(২)     আধুনিক সমাজে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বয়স্করা পরিবারে অতিরিক্ত একটি বোঝাস্বরূপ অবস্থান করেন। তাঁদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব যেন কারও নেই। ফলে তাঁরা পীড়িত হলে কেউ তাঁদের সেবা-যত্নে এগিয়ে আসে না, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা রোগে-শোকে-তাপে গৃহত্যাগ করতে বাধ্য হন। মাথা গোঁজার আস্তানা খুঁজে বেড়ান। কেবল বেঁচে থাকার আশ্রয়ের সন্ধানে উন্মুখ হয়ে ওঠেন। সেই আশ্রয়েরই অন্য নাম বৃদ্ধাশ্রম। নিছক শখের বশে নয়, বেঁচে থাকার একান্ত তাগিদেই এইসব মানুষ বৃদ্ধাশ্রমে আসেন।

(৩)     জীবন জুড়ে আছে এঁদের নানা স্মৃতি। অতীতকে এঁরা ভুলতে পারেন না। আর তাই অতীত স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে মনোকষ্টে ভোগেন। ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে তাঁদের মন। অথচ এঁরা নিরুপায়। বৃদ্ধাশ্রম কখনোই প্রয়োজন হত না যদি সন্তানেরা তাঁদের প্রতি দায়দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষা বা জীবিকার অজুহাতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পিতা-মাতার প্রতি তাঁর সন্তানেরা উদাসীন থাকে। পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান হবে—এ কথা ভাবা সমীচীন নয়।

(৪)     যদিও বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্করা তাঁদের সমবয়সী অনেক সঙ্গীর সান্নিধ্য লাভ করে থাকেন, কিন্তু এই বয়স চায় নিজের সন্তান-সন্ততিদের দেখে জীবনের বাকি সময় কাটাতে। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা তো রক্তের সম্পর্কে যুক্ত, মানুষের সাহচর্যের উপর নির্ভরশীল।

(৫)     সময় বড়োই বেগবান, থেমে থাকা তার ধর্ম নয়। আবার সময়ও মানুষকে কখনও ছেড়ে দেয় না। ফলে যে দায়িত্ববোধহীনতা থেকে ‘সব পেয়েছির দেশ’ হিসেবে ‘বৃদ্ধাশ্রম’কে বেছে নেওয়া হয়, তাতে কখনও সুখ পাওয়া যায় না। কেন-না অনেক যন্ত্রণা থেকেই মানুষ বাধ্য হন বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে আশ্রয় অন্বেষণে। সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজন নেই। www.banglaguide.in


উচ্চমাধ্যমিক ২০১৫

অন্যান্য বিতর্কমূলক রচনা



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!