Menu

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানুষের অসহায়তা pdf


Last Update : February 15, 2022

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানুষের অসহায়তা : এই বিষয়ে লিখতে গেলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় কী এবং সেই বিপর্যয়ের কারণ কী? এখন এই বিপর্যয় কীভাবে মানবজীবনকে অসহায় করে তোলে সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল হতে হবে। এখন দেখে নাও সম্পূর্ণ রচনা


সূচনা

বিপর্যয় এখন সর্বত্র—প্রকৃতিতে, রাষ্ট্রে, সমাজে, এমনকি মানুষের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতেও। অথচ, মানুষ তার সৃষ্টির ঊষাকাল থেকেই প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। | প্রকৃতিকে চেনা, জানা এবং তাকে যথার্থভাবে ব্যবহারের মধ্যে দিয়েই মানবসভ্যতা বিকশিত হয়েছে। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই প্রকৃতিকে শুধু ব্যবহার করতে শেখে নি, তাকে জয় করার কৌশলও আয়ত্ত করল। আর সেই কৌশল থেকেই জন্ম নিল পরিবেশের পরিবর্তনশীলতা, সৃষ্টি হল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের। কোন কোন সময় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক কারণে আবার কোন সময় মানুষের নিজেদের অবহেলায় সৃষ্টি হল এই বিপর্যয়। মানুষ এই বিপর্যয়ের সূত্রে নিজেকে অসহায় রূপে চিহ্নিত করল।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় কী

সভ্যতার অগ্রগতিতে সমাজ ও পরিবেশের বিক্রিয়ার ফলে পরিবেশের যে পরিবর্তনশীলতা—তাকেই আমরা প্রাকৃতিক বিপর্যয় রূপে চিহ্নিত করি। এই বিপর্যয় দুই শ্রেণির —প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক কারণে পরিবেশের আকস্মিক বিপর্যয় হল প্রাকৃতিক বিপর্যয়। যেমন, ভূকম্পন, অগ্ন্যুৎপাত, সাইক্লোন, টর্নেডো, বন্যা, পর্বতগাত্রে ধস ইত্যাদি। আবার এই বিপর্যয় যখন মনুষ্যসৃষ্ট হয় তখনও সেই বিপর্যয় মানুষের কাছে অশুভ সংকেত নিয়ে আসে।

অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা

বিপর্যয়ের কারণ

বিজ্ঞানের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এল পঞ্চদশ শতাব্দীতে। দেখা দিল শিল্প-বিপ্লব। নতুন নতুন দেশ আবিষ্কারের ফলে পণ্যের চাহিদা গেল বেড়ে। পণ্যের চাহিদার জন্য প্রয়োজন হল উন্নত প্রযুক্তির। নিজের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে অটুট রেখে অন্য দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন করা এবং সেই সম্পদের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের বিক্রির জন্য বাজার সৃষ্টি করা এবং তার জন্য চাই পররাজ্য গ্রাস আর চাই যুদ্ধ, যুদ্ধের জন্য চাই উন্নত মানের অস্ত্র এবং তার জন্য চাই প্রযুক্তি।

আরো পড়ুন-  অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ PDF

বিপর্যয়ের স্বরূপ

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অন্যতম রূপ হল ভূমিকম্প। এর ফলে প্রায় প্রতিবছরই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনহানি ঘটছে। দ্বিতীয় শ্রেণির বিপর্যয় হল অগ্ন্যুৎপাত। আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে নির্গত লাভা, গ্যাস ও ছাই ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হয়ে চারপাশের পরিবেশ ধ্বংস করে। তাপ মাত্রাও হঠাৎ বেড়ে যায়। সামুদ্রিক বিপর্যয় হল আর এক ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়। সাইক্লোন, টাইফুন, হ্যারিকেন প্রভৃতি সবই সামুদ্রিক বিপর্যয়। এরপর আসে বন্যার কথা। নদীর অববাহিকা অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, নদীতে পলি জমা, ব্যাপক গাছ কাটা ও ভূমিধস এবং নানা ভূ-তাত্ত্বিক পরিবর্তনের কারণে বন্যার ভয়াবহতা দেখা যায়। এছাড়া পাহাড়ে ধস নেমেও বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।

অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা

মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়

সভ্যতার অগ্রগতিতে শিল্প স্থাপনের ফলে বিভিন্ন বিপর্যয় সৃষ্ট হচ্ছে। যেমন, ১৯৮৪ সালে ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার কথা সকলের জানা। শিল্পক্ষেত্রে এটাই পৃথিবীর সবথেকে ভয়াবহ ও জীবন হানিকর দুর্ঘটনা। অন্যদিকে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েট ইউনিয়নের চেরনোবিল পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের দুর্ঘটনায় তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। ১৯৪৫-এর হিরোসিমা-নাগাসাকির ঘটনা সবার জানা। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানের মিনামাটা উপসাগর কূলে প্লাস্টিক পেন্ট তৈরির কারখানার বর্জ্য পদার্থ পারদ থেকে (ঐ সমুদ্রের মাছ খেয়ে) পারদঘটিত দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষ মারা যায়।

মানুষের অসহায়তা ও সমাধানের পথ

মানুষ যতই নিজেকে সভ্য বলে মনে করছে ততই তাদের অসহায়তা আরো বেশি প্রকট হয়ে উঠছে। মানুষ যেদিন প্রকৃতিকে জয় করার কৌশল আয়ত্ত করে প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের মন্ত্র গ্রহণ করেছিল, সেদিন ছিল মানুষের সুদিন। বিজ্ঞানের আবিষ্কার পৃথিবীকে পাল্টে দিল ঠিকই কিন্তু বিজ্ঞানের অভিশাপ নিয়ে এল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো উপসর্গ। তাই এই বিপর্যয় থেকে বাঁচবার জন্য পথ খোঁজার শুরু। বিভিন্ন উন্নত দেশে শুরু হয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচবার পথ সন্ধান। আমাদের দেশেও এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জলবিভাজিকা নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্ব দিয়ে বন্যার প্রকোপ যাতে কমানো যায়—তার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমন কি ভারতের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পরিবেশ বিদ্যাকে আবশ্যিক পাঠ্য করা হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করার জন্য।

আরো পড়ুন-  বন, বন্যপ্রাণী ও মানব জীবন PDF

অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা

উপসংহার

সভ্যতার অগ্রগতি যদি মানুষের সার্বিক মঙ্গলের কারণ না হয়, মানুষ যদি বারবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়—সে প্রাকৃতিক কারণে হোক্ কিংবা মনুষ্য সৃষ্ট হোক্ —তাহলে তো কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়–দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর।’ মানুষকে যান্ত্রিকতা পরিহার করে হতে হবে প্রাকৃতিক, আর প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার শিখতে হবে মানুষকে। কারণ প্রকৃতি থেকে গ্রহণ করব সব আর প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দেব শুধুই উচ্ছিষ্ট; সেই উচ্ছিষ্ট প্রকৃতি গ্রহণ করে যদি বিপর্যয় ঘটিয়ে মানুষের অসহায়তা বাড়িয়ে দেয় তার দোষ কি শুধু প্রকৃতির? প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নিজেকে টিকিয়ে রাখার মানসিকতার মধ্যে কি অসহায়তার কারণ নিহিত নেই? একথা ভাবতে হবে সবাইকে-ই এবং এখন থেকে তা না হলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতেই হবে।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানুষের অসহায়তা অনুসরণে লেখা যায়

* প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক *

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!