Menu

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার pdf


Last Update : February 16, 2022

“বিজ্ঞান ও কুসংস্কার” এই বিষয়ক প্রবন্ধে তোমাদের নজর দিতে হবে বিজ্ঞানের নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ঘটে চলা নানা সংস্কারের নামে কুসংস্কারের বিষয়টিকে। আমরা বিজ্ঞানের উন্নতিকে কাজে লাগিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি ঠিকই কিন্তু মানসিকভাবে আমরা কতখানি সংস্কারমুক্ত হয়েছি–সেই বিষয় এখানে দেখাতে হবে।


ভূমিকা

Superstition is the religion of feeble mind’ অর্থাৎ কুসংস্কার অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক মানসিকতার প্রকাশ, আধুনিক জীবনের যুক্তিবাদী প্রগতিশীল মনন ও জীবনের প্রতিকূল। সংস্কারের অর্থ যখন শুদ্ধি বা শোধন না হয়ে ভ্রান্ত ধারণা, রীতি অথবা ধর্ম বিশ্বাস রূপে পরিগণিত হয় তখন তা সংস্কার না হয়ে হয় কুসংস্কার। অন্যদিকে বিজ্ঞানের সত্য হল যুক্তিতর্কের মাধ্যমে কার্যকারণ পরম্পরায় প্রমাণিত সত্য। এই সতো বিশ্বাসী হলেই মানুষ বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠে। কিন্তু আধুনিক জীবনে সেই বিজ্ঞানমনস্কতা অনেক সময় কুংস্কারের বেড়াজালে আবন্ধ হয়ে পড়ছে-যা সভ্যতার অগ্রগতিতে বাধাস্বরূপ। একসময় পোপ ও যাজকতত্ত্ব মনে করতো পৃথিবী স্থির, সূর্য তার চারপাশে ঘুরছে। কিন্তু গ্যালিলিও প্রমাণ করে দেখালেন, সূর্য স্থির ও পৃথিবী তার চারদিকে ঘুরছে। তাই তাকে নজরবন্দী করে রাখা হল। এ ঘটনা প্রমাণ করে বিজ্ঞানচেতনাকে কুসংস্কার দিয়ে ঢেকে দেবার প্রবণতা বহুদিনের।

অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা

বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানচেতনা

বিজ্ঞান হল বিশেষ জ্ঞান-যা কার্যকারণ পরম্পরায় যুক্তির মাধ্যমে গৃহীত সত্য। আর এই যুক্তিবোধ থেকেই আসে বিজ্ঞানচেতনা সুতরাং বিজ্ঞানচেতনা হল যুক্তি পরম্পরায় সিন্ধ যে সত্যের উদ্ঘাটন তার প্রতি বিশ্বাস। এই বিশ্বাস থাকলে অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক শক্তির উপর ভরসা কমে, আত্মবিশ্বাসে মানুষ বলীয়ান হয়। এই বিজ্ঞানচেতনার জন্ম সেদিন, যেদিন মানুষ ভয়াবহ প্রকৃতিকে বশ করা শিখল ও প্রাকৃতিক রহস্যকে উদ্ঘাটন করতে সচেষ্ট হল। এই বিজ্ঞানচেতনা কুসংস্কার দূরীকরণে সহায়ক হল। বিজ্ঞানচেতনার প্রসার হওয়ায় অনাবৃষ্টির জন্য ইন্দ্রদেবতার পূজা বন্ধ হল।

আরো পড়ুন-  বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ pdf | Best 5 Unique Points

অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা

কুসংস্কার কী

কুসংস্কার হল সংস্কারের বিকৃত রূপ। অবৈজ্ঞানিক যুক্তিরহিত অন্ধবিশ্বাস-এর নাম কুসংস্কার। এই কুসংস্কার ধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং তা কূপমণ্ডূকতার লক্ষণ।

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান

প্রাত্যহিক জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য যুক্তিপ্রধান মনোভাব যা বিজ্ঞানের অবদান। কেননা গাছ থেকে আপেল পড়া কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়, তা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব। এই প্রাত্যহিক জীবনে যুক্তি চিন্তায় ও চেতনায় এলে সেই মানুষ আধুনিক মানুষ হয়ে ওঠে। বিজ্ঞান ও কুসংস্কার আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তির কাছে কুসংস্কারের অন্ধকার দূরীভূতহয়, ভ্রান্ত ধারণার খোলস খসে যায়। তখন বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে কার্যকারণ যোগসূত্রে অর্জিত জ্ঞান ও সত্যরূপ বিজ্ঞানসচেতন মানুষের কাছে প্রতিভাত হয়। তখন প্রচলিত প্রথা-প্রকরণের অসারত্ব ধরা পড়ে যায় আর বিনষ্ট হয় কুসংস্কারের যুক্তিহীন দাসত্ব। কারণ বিজ্ঞান ও কুসংস্কার আসলে তেল আর জল—যা কখনো একসঙ্গে মিশ্রিত হয় না।

উদাহরণ

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘অচলায়তন’ নাটকে আধুনিক জীবনের কুসংস্কারের রূপ-কে তীক্ষ্ণ শ্লেষে কশাঘাত করেছেন। অচলায়তনের বালক সুভদ্র তিনশো পঁয়তাল্লিশ বছরের আগল ঘুচিয়ে উত্তর দিকের জানালা খুলে দিয়েছে, যা আয়তনের নিয়ম অনুযায়ী পাপকর্ম হলেও পঞ্চক সুভদ্রর এই কাজ সমর্থন করে। কারণ সে কুসংস্কারাচ্ছন্ন নয়, বরং আয়তনের বিভিন্ন সংস্কারকে সে ভাঙতে চায়। সেখানের একটি কুসংস্কারের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, পূর্বফাল্গুনী নক্ষত্রে কাকিনী সরোবরের নৈঋত কোণে ঢোঁড়াসাপের খোলস খুঁজে, সেই খোলস কালো রঙের ঘোড়ার লেজের সাতগাছি চুল দিয়ে বেঁধে পুড়িয়ে ধোঁয়া করলে সেই ধোঁয়া পিতৃপুরুষেরা ঘ্রাণ নিতে আসেন। এতে পুণ্য হয়। এই কুসংস্কার আয়তনের সবাই বিশ্বাস করলেও পঞ্চক বিশ্বাস করে না। কারণ সে বিজ্ঞানমনস্ক, তাই যুক্তি দিয়ে সে এ সব ঘটনা বিচার করে, বিচার করে তথাকথিত পাপ-পুণ্যবোধের।

অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা

কুসংস্কারের স্বরূপ ও আধুনিক জীবন

কুসংস্কারের মাহায্যে কী না হয়। বোম্বাইতে সমুদ্রের নোনা জল মিষ্টি হয়ে যায়, গণেশ ঠাকুর দুধ খায়, কমপ্ল্যানও খায়; পীরবাবা ও গুরুজীর মন্ত্রে যাবতীয় ব্যাধি নির্মূল হয়, গুরুবাবার পচাগলা মৃতদেহও রেখে দেওয়া হয় তিনি আবার বেঁচে উঠবেন ভেবে, সাপে কামড়ানো রোগীর পুনর্জন্ম হয় ওঝার ঝাড়ফুঁকে। আবার কিছু মানুষের কোপে পড়লে সাধারণ নারীও ‘ডাইনী’তে পরিণত হয়। তাই, তাকে পিটিয়ে মারতে হয়। এমন ঘটনা আধুনিক জীবনে প্রায়ই ঘটে থাকে। শুধু কি তাই আধুনিক মানুষ মুখে ইংরেজি বলছেন, পরনে ও চাল-চলনে তথাকথিত আধুনিকতার কোনো ত্রুটি নেই, কিন্তু তিনিই আবার দুহাতের দশ আঙুলে গ্রহের ফেরের জন্য আংটি পরিবৃত হয়ে রয়েছেন। আবার ইংরেজি শিক্ষিত ভদ্রলোক নিজের মেয়েকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িয়েছেন, ড্যাডি মাম্মিতে মেয়েকে অভ্যস্ত করিয়েছেন, ইংরেজিতে কথা বলা আধুনিক কায়দা-কানুন শিখিয়েছেন কিন্তু তিনিই আবার মেয়ের সময় করকোষ্ঠী গণনা করাচ্ছেন। এমন তঞ্চকতা আধুনিক সমাজে প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এমনকি আধুনিক মানুষ নিজের গাড়িতে স্ত্রীকে বাম পাশে বসিয়ে ড্রাইভ করে নিয়ে যাচ্ছেন, কালো বিড়ালকে রাস্তা পার হতে দেখে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকছেন। এসব ঘটনা প্রমাণ করে কুসংস্কার আধুনিক সমাজে এখনো বন্ধমূল।

আরো পড়ুন-  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান PDF | Best 9 Unique Points

কুসংস্কার দূরীকরণে বিজ্ঞানের ভূমিকা

বিজ্ঞান তথা বিজ্ঞানচেতনা পারে এ ধরনের কুসংস্কারকে দূরে সরিয়ে দিতে। এজন্য সাধারণ মানুষের কাছে বিজ্ঞানচেতনাকে পৌঁছে দিতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে মানুষের কুসংস্কার দূরীকরণে মধ্যে আত্মবিশ্বাসকে। উপযুক্ত শিক্ষা ও সচেতনতা পারে তা করতে। বিজ্ঞানের ভূমিকা যেখানে পাল্স পোলিও কর্মসূচি কুসংস্কারের কারণে সার্বিক সাফল্য লাভ করতে পারছে না সেখানে রোগ অনেক গভীরে। সেই রোগ সারাতে হবে সহৃদয়তা ও যুক্তি দিয়ে। সেজন্য চাই সংশ্লিষ্ট সকলের সদর্থক ইচ্ছা।

অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা

করণীয়

শুধু কুসংস্কার দূরীকরণে নয়, মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানচেতনা বাড়াতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন যদি উন্নয়নের মাপকাঠি হয়, সেক্ষেত্রেও এই কুসংস্কার প্রধান অন্তরায়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার ঘটাতে বৈদ্যুতিন মাধ্যম বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। বিভিন্ন বিষয়সূচিতে বিজ্ঞানচেতনা প্রসারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা উচিত। দেশের ধর্মস্থানগুলির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা উচিত—যাতে মানুষের মধ্যে গুজব ছড়ানো না হয় কিম্বা মানুষের দুর্বলতাগুলিকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা না হয়।

উপসংহার

আমাদের সাধ অনেক কিন্তু সাধ্যের ক্ষেত্রে ভাটার টান। তাই বিভিন্ন উপসর্গ আমাদের পেয়ে বসে—ম্যালেরিয়ার মশা থেকে পুলিশের দারোগা পর্যন্ত। যে কোনো চেতনাকে বজায় রাখতে হলে চাই প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি—যা কোনো অবৈধ শক্তির কাছে পদানত হয় না। লেজ যদি কুকুরকে নাড়ায়, তাহলে কুসংস্কার বিজ্ঞানকে নাড়াতে পারে, অন্তত মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দেয়। তবে তার জন্য চিন্তার কিছুই নেই, বিজ্ঞানচেতনার প্রসার হলে কুসংস্কার অপসৃত হবেই।


“বিজ্ঞান ও কুসংস্কার” অনুসরণে লেখা যায়

* প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানচেতনা বনাম কুসংস্কার *

অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!