Menu

শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি প্রবন্ধ রচনা PDF


শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি

শৈশবের স্মৃতিচারণা

এই রচনার অনুসরণে লেখা যায়

সূচনা

মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় পিছু ডাকে। শৈশবে যখন পৃথিবীর বুকে পা রেখেছিলাম জানতাম না জীবন কি—এ যেন এক রহস্যের সিন্দুকের মতো ছিল আমার কাছে। বেশ মনে পড়ে শৈশবের কথা যখন পরীক্ষার পরে একলা বারান্দায় বসে থাকি; রৌদ্র ঝাঁ ঝাঁ করে, পাশেই কৃষ্ণচূড়া গাছ—কখনো সে যেন লাল চাদরে নিজেকে মুড়ে নেয়। বারবার মনে ভেসে আসে শৈশবের কথা—যেন ভুলে যাই আমি কোথায় আছি।

শৈশবের স্মৃতি

মায়ের মুখে শুনেছি আমার শৈশবের কথা—ছবিও দেখেছি। সারাদিন যেন বাড়িতে আমার রাজত্ব চলত! খেলার মধ্যে ছিল না বেশি কিছু–একটা সাইকেল, বল – এই যথেষ্ট ছিল। মন বসত না কিছুতেই, খালি এদিক-ওদিক তাকাতাম, জানালার বাইরে, খাটের তলায়। খাটের তলাটা যেন আমার কাছে কি রকম রহস্যে ভরা ছিল। প্রায়ই মনে পড়ে, আমি গুড়ি মেরে খাটের নীচে কি খুঁজতাম। পড়াশোনা করতাম না বললেই হয়। যতটুকু মা জোর করে পড়াত— তখন তো আর মাথায় পরীক্ষার চিন্তা ঘুরত না। এখন সময় কতো পাল্টে গেছে, আর তো বাইরের দিকে তাকানোর ইচ্ছে করে না, ইচ্ছে করলেও সময় পাই না, পড়ার টেবিলে বোঝাই করা বই দেখে মনে শিহরণ জাগে।

বাবার সাথে বিকেলবেলা বেড়াতে যেতাম, আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা নদী, নদী বললে বেশি বলা হয়। ওটা কেবল একটা সরু জলের ধারা মাত্র। বাবার হাত ধরে জল ছেটাতে ছেটাতে যেতাম। আর মনে পড়ে শেওলা দেখে খুব ভয় পেতাম।

স্মৃতিচারণা

আমি ছোটোবেলায় অনেক কুকর্মও করেছি। খেলতে গিয়ে বিছানা থেকে পড়ে দুবার মাথাও ফাটিয়েছি—একবার মা-বাবা আমাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। এরকমই অম্লমধুর কতো স্মৃতি এখনও মনে পড়লে নিজের মনেই হেসে উঠি। মা প্রশ্ন করে—“কিরে হঠাৎ পাগলের মতো হাসছিস কেন?” আমি বলি—“কিছু না, এমনি।” আবার প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিন খুব কেঁদেছিলাম। এ আবার কোন্ জগতে চলে এলাম বাবা! আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি এই যান্ত্রিক জীবনযাত্রায়। এখন–এখন আমি আর মানুষ নই, যন্ত্র হয়ে গেছি, নিজের মধ্যে সেই আগেকার সময়ের নিজেকে আর খুঁজে পাই না বলে কষ্ট হয় বটে।

আরো পড়ুন-  একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, Best Unique 7 Points, PDF

বর্তমান জীবনে স্মৃতির প্রাসঙ্গিকতা

বর্তমানে ড্রয়িংরুমের কোণে রাখা বোকা বাক্সটির প্রতি এক অদ্ভুত নেশা লেগে থাকে শিশুদের। এখন যতই তাদের বলা হোক না কেন—“জানলা দিয়ে আকাশটাকে দেখো কিংবা টিভি দেখো না’—কে শুনেছে সে কথা! আকাশ মাথায় থাক, চোখের সামনে বরং থাক টিভি। এই টিভি কালচার শিশুকে কৃত্রিম করে দিচ্ছে। স্নো পয়জনিং-এর মতো কেড়ে নিচ্ছে শিশুর সুখানুভূতি গুলিকে, গুলিয়ে দিচ্ছে ভাব-ভালবাসা, শ্রদ্ধা-ঘৃণা, অনুরাগ-বীতরাগের বোধগুলিকে।

একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে যাওয়ায়, ফ্ল্যাট কালচার এসে যাওয়ায় পরিবারে বয়স্ক লোকেদের স্থান আজ আর নেই, তাঁদের স্থান বৃদ্ধাশ্রমে। তাই শিশুদের কাছে দাদু-ঠাকুমার কোলে চেপে ‘আয় আয় চাঁদমামা’ শোলোক বলার মাধুর্য নেই, নেই শোলোক বলার ‘কাজলা দিদি’, নেই রাজপুত্র, রাজকন্যা, ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমীর গল্প। আর রামায়ণের গল্পের কথা তো দূর অস্ত।

শেষকথা

বর্তমান জীবন আমি ফেলে রেখে আবার অনুভব করতে চাই শীতের বিকেলে ঘন নীল রাত্রির পূর্বাভাষ, দুপুরবেলায় বিশ্বচরাচর মাঝে একাকিত্বের ছায়া, দেখতে চাই ফাল্গুনের তারা ভরা আকাশ। জীবনানন্দ যেমন রূপসী বাংলার মোহে আবার ধানসিড়ি নদীটির তীরে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন, তেমনি আমিও ফেলে আসা জীবনের দিনগুলিকে ফিরে পেতে চাই, একান্ত আপনার করে। এভাবে স্মৃতিচারণার সূত্রে আমি আমার জীবনের পাথেয় সঞ্চয় করতে চাই।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!