Last Update : February 15, 2022
বিতর্কের বিষয় : অনলাইনে পঠনপাঠনই শিক্ষাকে পরিপূর্ণতা দেয়
মতের পক্ষে
অনলাইনে পঠনপাঠন ছাত্রছাত্রীদের কাছে পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ঘরে বসে যে-কোনো সময় ছাত্রছাত্রীরা নিজের পছন্দসই বিষয়কে অনলাইনের সাহায্যে অনুশীলন করার সুযোগ পাচ্ছে। স্কুলের চার দেওয়াল থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হল অনলাইনে পড়াশোনা।
মতের বিপক্ষে
অনলাইনে পড়াশোনা বিলাসিতা মাত্র। বিদ্যালয়ের শিক্ষা কখনোই অনলাইন থেকে পাওয়া যায় না। ছাত্রছাত্রীদের কাছে মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করার অজুহাত হল অনলাইনে পড়াশোনা।
মতের বিপক্ষে
বরফে ঢাকা পাহাড়ের ছবি দেখলেই যেমন ভূস্বর্গ কাশ্মীর দর্শনের তৃপ্তি লাভ হয় না, ঠিক তেমনভাবেই অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করে ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানার্জনের তৃপ্তি লাভ হয় না। শিক্ষার পরিপূর্ণতা তো দূরের কথা, অনলাইনের পঠনপাঠন হল শতাব্দীর সবচেয়ে বড়ো প্রহসন। ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ঝুলিকে শূন্যতায় পরিপূর্ণ করার একটি অবলম্বন হল যান্ত্রিকতায় মোড়া অনলাইন পঠনপাঠন। প্রতিপক্ষের তরফ থেকে. কিছু শূন্যগর্ভ বাক্যের দ্বারা অনলাইনের পঠনপাঠনের জয়ধ্বনি দেওয়া হলেও আমি মতের বিপক্ষে আমার যুক্তিক্রম পেশ করছি–
sahajbanglarachana.com
যুক্তি ১. পাঠক্রমের সংকীর্ণ গণ্ডির বাইরেও শিক্ষার আর-একটি দিক আছে—তা হল মূল্যবোধের শিক্ষা। সেই মূল্যবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত করে আমাদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন আমাদের শিক্ষকেরা। অনলাইনের ক্ষুদ্র পরিসরে কখনোই মানবিকতা বা মূল্যবোধের শিক্ষা লাভ করা যায় না। এই কারণে অনলাইনে পঠনপাঠন শিক্ষাকে পরিপূর্ণতা দিতে সম্পূর্ণভাবে অক্ষম।
যুক্তি ২. বিজয় উৎসবে গেলে আমরা যেমন আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠি, ঠিক তেমনই শোকসভায় গেলে নীরব থাকি। অর্থাৎ, পরিবেশ আমাদের মানসিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেহেতু শিক্ষার আদর্শ স্থান হল বিদ্যালয়, তাই বিদ্যালয়, আমাদের শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করে। এই কারণেই বিদ্যালয়ের বাইরে কখনোই শিক্ষা পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না।
যুক্তি ৩. শিক্ষকদের সাহচার্যে বিদ্যালয়ে প্রাপ্ত শিক্ষাই আমার কাছে আকর্ষণীয় এবং গ্রহণযোগ্য। অনলাইনের শিক্ষা কখনোই আকর্ষণীয় হতে পারে না। ওটা আলেয়ার মতো ছলনাময়ী। মোহময়ী অনলাইনের আকর্ষণ আমাদের দিকভ্রষ্ট করে। ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার বদলে অনলাইনের নেশায় মশগুল হয়ে ওঠে। অনলাইনে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানের বদলে শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটাই দায়িত্ব নিয়ে করে থাকে।
sahajbanglarachana.com
যুক্তি ৪. বিদ্যালয়ের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত। আর অনলাইন ধনীদের বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ। অনেক দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছারীদেরই electronics-gadgets নেই। তারা অনলাইনে পঠনপাঠন থেকে তাই বঞ্চিত। সিংহভাগ ছাত্রছাত্রীই যে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত, সেই শিক্ষা কি কখনো পরিপূর্ণ হতে পারে?
যুক্তি ৫. বিদ্যালয়ের দেয়াল, প্রিয় শিক্ষকদের শাসন, তর্জন, স্নেহ-ভালোবাসা, ছুটির ঘণ্টা ধ্বনি, বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি—এগুলো কি কখনো অনলাইনে পাওয়া সম্ভব? বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের যে নাড়ির সম্পর্ক আছে, তা কখনোই অনলাইনের সঙ্গে হতে পারে না। যার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের আত্মিক টান নেই, সেই অনলাইন কী করে শিক্ষার একমাত্র মাধ্যম হতে পারে?
যুক্তি ৬. শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকেরা যখন আমাদের কোনো পড়া বোঝান, আমরা সেটি না বুঝলে তিনি বারংবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে আমাদের মনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দুর করেন, কৌতূহল নিবারণ করেন। অনলাইনে সে সুবিধা বা সুযোগ কোথায়?
যুক্তি ৭. অনলাইন হল প্রতারণার মস্ত ফাঁদ। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়ে আমরা পরীক্ষা দিই, যেখানে মেধার সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব। কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষা যেন প্রহসন। সবাই বাড়ি বসে নানা উপায় অবলম্বন করে, পরীক্ষা বৈতরণী পারের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে—যা কখনোই মেধার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে না। বরং ছাত্রছাত্রীদের বিপথগামী হতে প্রলুব্ধ করে।
সুতরাং এটা এখন স্পষ্ট যে, অনলাইনের পঠনপাঠন খাতায়-কলমে কার্যকরী হলেও সদর্থে তার বাস্তবিক ভিত্তি খুব দুর্বল।
sahajbanglarachana.com
অন্যান্য বিতর্কমূলক রচনা