Menu

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলই দেশের ভবিষ্যৎ pdf


Last Update : February 15, 2022

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রবন্ধসূচিতে চার ধরণের প্রবন্ধ রয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো বিতর্কমূলক রচনা। একটি সমাজ-সংশ্লিষ্ট বিষয় এক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়। দেওয়া থাকে সেই বিষয়ের পক্ষে কিছু যুক্তি। পরিক্ষার্থীকে সেই যুক্তি খণ্ডন করে করে সেই বক্তব্যের বিরুদ্ধ মত প্রতিষ্ঠা করাই হলো মূল কাজ। অর্থাৎ “বিপক্ষে” অংশটিই তোমাদের লিখতে হবে।


পক্ষে


একুশ শতকের সূচনায় আমরা বাস করছি একটি গ্লোবাল ভিলেজে। গোটা পৃথিবীই যেখানে আমার ঘর, সেখানে সংযোগের ভাষা হতে পারে একমাত্র ইংরেজি। পেশাগত ক্ষেত্রে এখন নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বস্তুতপক্ষে ভারতে ব্রিটিশ আমল থেকেই ইংরেজির গতি দুর্বার। দেশবাসী ইংরেজদের তাড়ালেও তাদের ভাষাকে গ্রহণ করেছে। সে তার বাস্তব উপযোগিতার কারণেই। www.banglaguide.in

        উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ইংরেজি ছাড়া শিক্ষাগ্রহণ অসম্ভব। ইংরেজির মাধ্যমেই বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে। স্বাধীনতার পরে এতগুলো দিন পার হয়ে গেলেও আমরা একটা পরিভাষাকোষ ঠিকমতো গড়ে তুলতে পারলাম না। শুধুমাত্র আবেগকে সম্বল করে ইংরেজি-বিদ্বেষ বিচক্ষণতার পরিচয় নয়।

        ইংরেজির বদলে দেশীয় ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করলে জাতীয় স্তরেও সমন্বয়ের অভাব তীব্রতর হবে। মনে রাখতে হবে, হিন্দিভাষী রাজ্যের বাইরেও কিন্তু অনেক রাজ্য রয়েছে।

        অতএব ইংরেজি একমাত্র সম্বল। আর সেই ইংরেজিকে শিক্ষা ও জীবনযাপনের মাধ্যম করে তোলার জন্যই প্রয়োজন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল যুগের চাহিদা। শুধু ইংরেজি বা ইংরেজি মাধ্যমে অন্য বিষয়ের শিক্ষাটাই মূল নয়, এর বাইরেও নানা বিষয় এ ধরনের স্কুলগুলিতে শিক্ষা দেওয়া হয়। আজকের ছোটো পরিবারে প্রত্যেক বাবা-মাই চান তাদের ছেলেটি বা মেয়েটি হোক সবথেকে স্মার্ট। চলনে-বলনে ইংরেজিই তা সম্ভব করে তুলতে পারে। www.banglaguide.in

পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যাবে, একসময় প্রাথমিকে ইংরেজিকে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুধু মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের সেই চেষ্টা সফল হয়নি, পুনর্মূল্যায়নের পরে প্রাথমিকে ইংরেজি আবার ফিরে আসে। পরবর্তীতে সরকারি উদ্যোগেই সরকারি স্কুলগুলোতে ইংরেজি মাধ্যম চালুর চেষ্টা শুরু হয়েছে। এসবই ইংরেজির গুরুত্বের কারণে। আর তাই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলই আমাদের ভবিষ্যৎ।

আরো পড়ুন-  চলভাষ ছাড়া জীবন অচল, উচ্চমাধ্যমিক বিতর্ক রচনা, PDF

বিপক্ষে


ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে বিপক্ষে ইংরেজি ভাষার শুধুমাত্র গুণগানই শোনা গেল। এই বক্তব্য সম্পুর্ন একপেশে এবং অমীমাংসিত। একইসঙ্গে গোটাকয়েক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিল।

১. ইংরেজ শাসন থেকে ইংরেজি ভাষার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে—এটা ইংরেজির উপযোগিতা না আমাদের ওপনিবেশিক মানসিকতা, তা ভেবে দেখতে হবে। “বিনা স্বদেশি ভাষা পুরে কি আশা?” – সেই ঈশ্বরগুপ্তের সময় থেকেই দ্বন্দ্বটা কিন্তু চলছিলই। আজ যখন প্রবীণ-তরুণ নির্বিশেষে বাঙালিদের দেখা যায় অশুদ্ধ ইংরেজিতে কথা বলছে, তবুও বাংলা বলছে না, তাদের আত্মঘাতী বাঙালি ছাড়া কিছুই বলা যায় না। মনে রাখতে হবে, এই বাঙালিরা বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির কাছেও দায়বদ্ধ নয়। অতএব ইংরেজি থাকুক, কিন্তু বাঙালি যেন ইংরেজিসর্বস্ব না হয়ে যায়। www.banglaguide.in

২. উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন, বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারের সঙ্গে সংযোগ প্রয়োজন ইত্যাদি যুক্তিকে তুলে ধরা হলেও এগুলো অসাড়। জার্মানি, রাশিয়া, জাপান— এইসব উন্নত দেশে কিন্তু ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যম নয়।

৩. একথা বলা হচ্ছে যে, যুগের চাহিদা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। আমরা বলি যে, এ হচ্ছে যুগের হুজুগ। ছেলেমেয়েদের শৈশব কেড়ে নিয়ে দু-বছর বয়স থেকে যেভাবে স্কুলে ভরতি করার প্রতিযোগিতা চলে, স্কুল ও পরিবার মিলে প্রাণপণে মাতৃভাষাকে ভুলিয়ে দেওয়ার সংগঠিত চেষ্টা শুরু হয়—তাকে হুজুগ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।

৪. ভোগবাদের যুগে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সৌজন্যে শিক্ষাও একটি পণ্য হয়ে উঠেছে। পাড়ায় পাড়ায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তৈরি হচ্ছে। উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই, যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নেই—এই অবস্থায় প্রচুর টাকার বিনিময়ে চলছে শিক্ষাদান প্রক্রিয়া। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়েরা নিজেদের নিঃস্ব করেও এইসব স্কুলে তাদের সন্তানদের পড়াচ্ছেন। মুষ্টিমেয় কিছু ভালো ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের বাইরে সর্বত্র একই ছবি। www.banglaguide.in

৫. গ্রাম-শহরের বৈষম্য আজও সমাজে বর্তমান। ভারত মানে ঝাঁ চকচকে কিছু আধুনিক শহরমাত্র নয়, হাজার-লক্ষ গ্রামও। সেখানে বিদ্যুৎ নেই, পাকা রাস্তা নেই, যোগাযোগের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই, পানীয় জলটুকুও নেই। সেখানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এক বিলাসিতা মাত্র। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের বিস্তার গ্রাম-শহরের শিক্ষার বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

আরো পড়ুন-  অনলাইনে পঠনপাঠনই শিক্ষাকে পরিপূর্ণতা দেয় PDF

৬. ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রসার দেশীয় মূল্যবোধ এবং জীবনাদর্শের উপরে আঘাত নিয়ে আসতে পারে। মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা বাড়বে, জাতীয়তাবাদের ধারণা বাধা পাবে। বিজায়ীয় সংস্কৃতির চাপে দেশীয় সংস্কৃতি ইতিমধ্যেই বিপন্ন। আর বিশ্বায়নের নামে নিজস্বতাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত চলছে।

৭. ইংরেজিকে অস্বীকার করে বাঁচা নয়, আবার ইংরেজি সর্বস্বতাও নয়—এটাই হওয়া উচিত আমাদের শিক্ষাদর্শন। ইংরেজি স্বাগত, কিন্তু ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নয়। www.banglaguide.in


বিতর্কমুলক বিষয়ের অন্যান্য রচনা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!