Last Update : February 15, 2022
পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে ছাত্রছাত্রীদের কোনো দায়িত্ববোধ কিংবা কর্তব্যবোধ রয়েছে কিনা এবং থাকলে কীভাবে তারা পরিবেশ সুরক্ষায় নিজেদের নিয়জিত রাখবে সে সম্পর্কে এই প্রবন্ধ। “পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা”
ভূমিকা
শসাশ্যামল দেশ এই ভারতবর্ষ। বাণিজ্যিক বাজার ও কাঁচামালের প্রভৃত সম্ভাবনার ক্ষেত্র ভারতবর্ষে থাকায় ভারতবর্ষ বিদেশিদের দ্বারা বারবার লুণ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বায়নের কুফলের ফলে সেই লুণ্ঠনের পরিমাণ আরো বেড়েছে। ভারতের যে পরিবেশ ও সংস্কৃতি বিশ্বের আঙিনায় নিজেকে প্রমাণ করে নিজেদের গৌরব প্রতিষ্ঠা করেছে, সেই পরিবেশ ও সংস্কৃতি আজ লুণ্ঠিত। আমাদের দেশের নিমগাছ, হলুদ, বাসমতি চাল, অবিশ্বাস্য হলেও আর আমাদের নেই, এমনকি আমাদের দেশের মাটি আজ অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ভারতের আকাশে, বাতাসে দূষণের ছড়াছড়ি। ভারতের মাটিতে যে চাষ হয় তা নিয়ন্ত্রণ করে ধনী দেশ, আর সেই সব ধনী দেশ যে সব মারাত্মক গ্যাস উৎপাদন করে, তা পৌঁছে যায় আমাদের মতো গরিব দেশগুলিতে। ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ হল আমাদের জনবিস্ফোরণ। ক্রমবর্ধমান এই বিস্ফোরণের চাপে তাই ভারতবর্ষের শ্যামল প্রকৃতি নানাভাবে অবহেলিত। একদিকে লুণ্ঠন আর অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য অবহেলা—এই দুয়ের সমন্বয়ে ভারতীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতির টালমাটাল অবস্থা। সেই প্রেক্ষিতে পরিবেশ উন্নয়নে দেশের ছাত্র সমাজের সচেতনতার ব্যাপার অস্বীকার করা যায় না।
অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা
আইনগত দিক
ভারতীয় সংবিধানের ৫১ (ক) ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের ভারতীয় পরিবেশ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। ছাত্রছাত্রী ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সেই দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবন্ধ। আসলে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকের চেতনা ব্যক্তিগত স্বার্থের অভিমুখে ধাবিত। ফলে নানা রকমের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ দেখতে গিয়ে জাতীয় স্বার্থ তথা পরিবেশগত দায়বন্ধতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দেখা দিচ্ছে নানান দূষণ। সেক্ষেত্রে সচেতন নাগরিক হিসেবে পরিবেশ রক্ষায় ও উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
পরিবেশ সচেতনতায় ছাত্র ছাত্রীদের ভূমিকা
সচেতনতাই পারে যে কোন উন্নয়নকে গতিশীল করতে। সেই উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীকেই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য যা করতে হবে তা হল
(ক) পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্বন্ধে নিজেদের সচেতন হওয়া। (খ) জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে অবহিত হয়ে, সে বিষয়ে প্রচার করা। (গ) সবরকম দূষণ ও তার কারণ সম্বন্ধে পারস্পরিক আলোচনা করে যথাসম্ভব তা বন্ধ করার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ। (ঘ) নিজেদের বাড়িতে পয়ঃপ্রণালী ঠিক রাখা। (ঙ) যে সব কারণে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বিঘ্নিত হয় সেসব কাজ না করা। আহার, নিদ্রা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন হওয়া। সুষম খাদ্য সম্বন্ধে চেতনা গড়ে তোলা। (চ) অবৈজ্ঞানিক মানসিকতা ও কুসংস্কার দূরীকরণে সচেষ্ট হওয়া। (ছ) ঘর গৃহস্থালীর বর্জ্য পদার্থ যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা। (জ) হাসপাতাল, নার্সিংহোম, স্কুল, কলেজ প্রভৃতি জায়গা সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখা। (ঝ) ধূমপান, মদ্যপান, ড্রাগ সেবন প্রভৃতি থেকে বিরত থাকা। (ঞ) স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, পার্ক, বাস, ট্রাম, ট্রেন প্রভৃতি জায়গায় খাবারের পরিত্যক্ত প্যাকেট না ফেলা। (ট) বাড়ির সংলগ্ন পরিবেশের পক্ষে উপযোগী—গাছ লাগানো ও পুরানো গাছ না কাটা। (ঠ) রোগ প্রতিরোধে গাছপালার যে ভূমিকা আছে, সেইসব গাছ যে আমাদের বন্ধু তা জেনে, সবাইকে জানানো। (ড) এজন্য পরিবেশ সম্পর্কিত নানান তথ্য গণমাধ্যমে যাতে প্রচারিত হতে পারে, সে বিষয়ে জনশিক্ষার ব্যবস্থা যাতে গৃহীত হয় তা দেখা উচিত সরকারের। শুধু ছাত্ররা সচেতন হলে হবে না, সেই সচেতনতা যাতে বিস্তৃত হয় সেজন্য দৃঢ় পদক্ষেপ ও কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে সরকারকে এবং সেই সঙ্গে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন জনগণকে।
অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা
উপসংহার
রবীন্দ্রনাথ দুঃখের সঙ্গে বলেছিলেন—
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আজকের ছাত্রসমাজকেও পরিবেশ উন্নয়নে কবিগুরুর এই কথা মনে রেখে ভবিষ্যৎ সুস্থ পরিবেশের স্বার্থে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে তথা পরিবেশের উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে।
অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা