শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা PDF
ভূমিকা
শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, আজকের আধুনিক বিশ্ব মিডিয়ার দ্বারা প্রভাবিত। মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্ব আজ মানুষের বাড়ির আঙিনায় উপস্থিত হয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত বিশ্বের যে কোনো জায়গার খবর ও চিত্র আজ আমাদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে যে কোনো বিষয়ে শিক্ষালাভ সহজ ও সুগম হয়েছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষের মতো উন্নতশীল দেশের গণজাগরণের ক্ষেত্রে এই গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা সর্বজন-স্বীকৃত। শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম দূরকে করেছে নিকট, শত্রুকে করেছে মিত্র, জানিয়েছে কত অজানাকে, তেমনি আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের নেতিবাচক দিকও শিক্ষাবিস্তারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ডেকে আনছে।
sahajbanglarachana.com
গণমাধ্যম কী
যে মাধ্যমের দ্বারা বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ পেয়ে উপকৃত হয় তাকে গণমাধ্যম বলা যেতে পারে। বহু প্রাচীনকাল থেকে লোকশিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন মাধ্যম। যেমন কীর্তন, কবিগান, মঙ্গলগান, ছড়া, ব্রতকথা, লোকগাথা, কথকতা, পুতুলনাচ ইত্যাদি। এগুলি ছিল যুগপৎ লোকশিক্ষা ও লোক-মনোরঞ্জনের প্রধান উপাদান। ক্রমে বিজ্ঞানের উন্নতিতে সংবাদপত্র, বেতার, চলচ্চিত্র, দূরদর্শন, টেপরেকর্ডার, ইন্টারনেট প্রভৃতি মাধ্যমের প্রচলন হয়।
গণমাধ্যমের উপযোগিতা
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ আজকের বিশ্বের উন্নতিতে গণমাধ্যমগুলি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। গণমাধ্যমগুলি যেমন মানুষের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেয়, মানুষকে আনন্দ দেয়, তেমনি প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে তা মানুষের শিক্ষাবিস্তারে সহায়ক হয়ে ওঠে। খবরের কাগজ, রেডিও, টিভি তাই আজকের মানুষের কাছে অন্যতম উপাদান। এইসব উপাদানগুলি মানুষের শিক্ষাবিকাশে ও সচেতনতা বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে।
sahajbanglarachana.com
সংবাদপত্র
আধুনিক যুগে গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের গুরুত্ব আজ সর্বস্তরে প্রসারিত। শুধু শহর নয়, সুদুর গ্রামেও কোনো চা-এর দোকানে সংবাদপত্র পাঠের জন্য মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। রাজনীতি থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত সব শ্রেণির সংবাদ, সংবাদপত্র থেকে মানুষ গ্রহণ করে। রাজনীতি, খেলাধুলা, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি যাবতীয় খবর পাওয়া যায় সংবাদপত্রে। দেশ-বিদেশের সেইসব নানান খবরের আলোকে সাধারণ মানুষের চেতনার বিস্তার ঘটে। বিশেষ করে জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে সংবাদপত্রের মাধ্যমে মানুষ যে শিক্ষালাভ করে, তার দ্বারা যথেষ্ট উপকৃত হয়। তাই সংবাদপত্র শুধু শিক্ষাবিস্তারে নয়—আধুনিক জীবনের অপরিহার্য উপাদান।
বেতার
জনজীবনে বেতারের ভূমিকাও যথেষ্ট। ভারতবর্ষে গণমাধ্যম হিসেবে বেতার এখনো সবচেয়ে বড় মাধ্যম। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সব শ্রেণির মানুষ যারা দূরদর্শন ব্যবহার করতে পারে না, তারা বেতারের মাধ্যমে বিভিন্ন খবর যেমন পায়, তেমনি মনোরঞ্জনের উপাদানও খুঁজে পায়। বিশেষ করে বেতারের নানা চ্যানেল ও দিনরাত্রিব্যাপী অনুষ্ঠান থেকে, শিক্ষার্থী থেকে আরম্ভ করে সাধারণ গৃহস্থ পর্যন্ত সকলে উপকৃত হয়। একজন কৃষকের কাছে বেতারের কৃষিকথার আসর তার জীবিকার উন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক। তাই সাধারণ গ্রামীণ জীবনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বেতারের বিকল্প নেই।
sahajbanglarachana.com
দূরদর্শন
বেতারের মতো দূরদর্শনও শিক্ষা ও চেতনার বিস্তারে শক্তিশালী গণমাধ্যম। শিশু থেকে বৃদ্ধ, কৃষিজীবী থেকে বুদ্ধিজীবী, শহরবাসী থেকে গ্রামবাসী সকলের কাছে দূরদর্শনের প্রভাব যথেষ্ট। ছাত্রসমাজও দূরদর্শনের দ্বারা উপকৃত হয়। যেমন ক্যুইজ, সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান, পরীক্ষা স্পেশ্যাল, জানা-অজানা, তরুণদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারে। আজকের ছাত্রসমাজ যে ব্যাপকভাবে দূরদর্শনের দ্বারা প্রভাবিত, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। শ্রব্য ও দৃশ্য মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শনের গুরুত্ব অপরিসীম।
চলচ্চিত্র
লোকশিক্ষা ও লোক-মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। কাহিনিচিত্র, ডকুমেন্টারি চিত্র প্রভৃতি থেকে মানুষের জ্ঞান ও চেতনার প্রসার ঘটে। অবসর যাপনে, চরিত্র গঠনে, নীতিশিক্ষার প্রসারে, সাংস্কৃতিক বোধের প্রসারে চলচ্চিত্র আধুনিক জীবনের অন্যতম গণমাধ্যম।
গণমাধ্যমের কুফল
শিক্ষাবিস্তারে যেমন গণমাধ্যমগুলির গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত ব্যবহার ও যথোচিত ব্যবহারের অভাবে তার কুফলও পড়ছে মানুষের উপর। আজকের অতিরিক্ত মিডিয়ার চাপ মানুষকে ক্রমশ বিপথে পরিচালিত করছে—কোনো কোনো ক্ষেত্রে। বিশেষ করে ছাত্রজীবনে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দূরদর্শনের কুফলগুলি প্রভাবিত করছে। অতিরিক্ত দূরদর্শন-নির্ভরতা দেখা যাচ্ছে শহর ও গ্রামের নারীদের। বিভিন্ন সিরিয়াল দেখার প্রভাব ব্যক্তিগত জীবনকে করছে দুর্বিষহ। কোনো কোনো ছাত্র দূরদর্শনে হত্যার দৃশ্যের অনুকরণে বাস্তবজীবনে তা সংঘটিত করে ফেলছে। | সংবাদপত্রেও যেভাবে রাজনীতির হিংসা-বিদ্বেষকে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ হিংসায় লিপ্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে কুরুচিকর বিজ্ঞাপন শিক্ষায় কুফল ডেকে আনছে। বেশ কিছু ধারাবাহিক (সিরিয়াল) মানুষকে আকৃষ্ট করে তাদের মানসিক গঠনে কুপ্রভাব ফেলছে।
sahajbanglarachana.com
উপসংহার
সব জিনিসেরই ভালো-মন্দ আছে, তবে মন্দের কথা ভেবে পিছিয়ে থাকলে হবে না, গণমাধ্যমগুলিকে শিক্ষা ও চেতনার বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা নিতেই হবে। তবে সেই সঙ্গে একথাও স্বীকার করতে হবে, আজ এই মুক্ত অর্থনীতির যুগে খোলা হাওয়ার পরিবেশে কিছু রক্ষাকবচ রেখে গণমাধ্যমের সুদূরপ্রসারী প্রভাবকে ছড়িয়ে দিতে হবে জনমানসে। গণমাধ্যম যদি শিক্ষাবিস্তারে ইতিবাচক দিকগুলিকে মেলে ধরতে পারে, তাহলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব অবশ্যম্ভাবী।